দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কালি দত্ত (৩০) নামে এক স্বর্ণকার যুবককে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোর রাতে পৌর শহরের উত্তর সুজাপুর গ্রামে ধৃত কালি দত্তের নিজ বাড়ী থেকে তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে পৃথক দুইটি মামলা রয়েছে। কালিদাস ফুলবাড়ী পৌর এলাকার উত্তর সুজাপুর প্রফেসর পাড়া গ্রামের শ্রী সুবল দত্তের ছেলে।
জানা যায়, গ্রেফতারকৃত কালিদাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ফেইক আইডি খুলে উত্তর সুজাপুর গ্রামের আজিজ মন্ডলের ছেলে কাজিম উদ্দিনের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট মানহানিকর প্রচার ও প্রকাশ করে। এ ঘটনায় ২১ ফেব্রুয়ারি কাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কালিদাসের নামে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ফুলবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
একইভাবে কালিদাস ফেইসবুকে ফেইক আইডির মধ্যমে ওই এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আবুল বাসার মো. মশিউজ্জামান রেজার ব্যক্তিগত ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে নানা প্রকার মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করে এবং তাকে ও তার পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্য করার অভিপ্রায়ে আক্রমণাত্তক, ভীতি প্রদর্শক তথ্য উপাত্ত প্রেরণ করে।
পরে যাচাই করে জানতে পারে ওই ফেসবুক আইডির প্রকৃত ব্যবহারকারী কালিদাস দত্ত। এরপর একই সাথে আবুল বাসার মো. মশিউজ্জামান রেজা বাদী হয়ে কালিদাস দত্তের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার সূত্র ধরে পুলিশ সোমবার রাতে উত্তর সুজাপুর প্রফেসর পাড়া এলাকা থেকে কালিদাস দত্তকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
ফুলবাড়ী থানার ওসি ফখরুল ইসলাম বলেন অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করার অভিযোগে চলতি সালের গত ২১ ফেব্রুয়ারি উত্তর সুজাপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আবুল বাশার মশিউজ্জামান রেজা ও একই গ্রামের আজিজ মন্ডলের ছেলে কাজিম উদ্দিন বাদি হয়ে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ও ৩১ ধারায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় তাকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ। আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনও ধরনের প্রপাগান্ডা চালান, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, মানহানিকর কোনও তথ্য দিলে তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া, ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনও ধরনের তথ্য উপাত্ত, যেকোনও ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে বলা হযেছে, কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে, তাহলে তাকে সাত বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। বেআইনিভাবে অন্য সাইটে প্রবেশ করার পর যদি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে।। আবার কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ডিভাইসে প্রবেশ করে তাহলে এক বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে। কেউ যদি কারও ডিভাইসে প্রবেশে সহায়তা করে, তাহলে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভয়ভীতি দেখায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করে, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়ভীতি দেখায়, তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানাসহ উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
৩০ ধারায় বলা হয়েছে, না জানিয়ে কেউ যদি কোনও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করে, তাহলে পাঁচ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৩০
আপনার মতামত জানানঃ