বগুড়ায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) ৩১ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে। দুদকের মামলায় বগুড়া পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দুদকের দায়েরকৃত মামলায় এই নির্দেশ দেন বগুড়ার স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এমরান হোসেন চৌধুরী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া দুদকের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, এসআইবিএলের ৩১ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় বৃহস্পতিবার চার্জ গঠনের দিন ধার্য ছিল। এতে আব্দুল মান্নান আকন্দ অনুপস্থিত থাকার জন্য আবেদন দিয়েছিলেন। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে ওয়ারেন্ট জারি করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
তিনি আরও জানান, ৩১ কোটি টাকা দুর্নীতির এই মামলায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত অন্যরা হলেন ব্যাংকের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, আতিকুল কবির, মাহবুবুর রহমান, জালিয়াত চক্রের সদস্য আকতার হোসেন, জহুরুল হক, এনামুল হক, মাকসুদুল হক, ফেরদৌস আলম। বৃহস্পতিবার আদালতে আব্দুল মান্নান আকন্দ বাদে সবাই উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল একই মামলায় বগুড়ার শুকরা এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল মান্নান আকন্দ আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে তাকে জেলহাজতে পাঠায় আদালত। আব্দুল মান্নান আকন্দ বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান।
আসন্ন বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে আব্দুল মান্নান আকন্দ স্বতন্ত্রভাবে মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় পৌর আওয়ামী লীগের চার নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সদস্য আব্দুল মান্নান আকন্দকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, ৩০ কোটি ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বগুড়া সদর থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে ঐ মামলা করেন। পরে মামলার অভিযোগপত্রে ৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত করে দুদক।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত ও অপরাধী চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে ব্যাংকের বগুড়া শাখার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ শাখার ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আতিকুল কবির, বগুড়া শাখার সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানের যোগসাজশে ব্যাংকের গ্রাহকদের হিসাব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই মামলা তদন্তের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নেয়া হয়। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করেন প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আখতার হামিদ ভূঞা। এরপর এ মামলার তদন্ত করেন উপপরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক। পরে ২০১৪ সালের ৪ জুন তিনি আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরে দুদকের সমন্বিত কার্যালয়ের (বগুড়া) তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত) আনোয়ারুল হককে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। আনোয়ারুল এ ঘটনা তদন্ত করে ২০১৭ সালের আগস্টে নয়জনের নামে অভিযোগপত্র জমা দেন। সেই মামলায় চার্জ গঠনের দিন ধার্য ছিল বৃহস্পতিবার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের প্রার্থীরাই কোনো না কোনো মামলার আসামি থাকেন। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের নিকট বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি, প্রতারণা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল সম্পত্তির মালিক বনে যান রাতারাতি, তারপরই নজর দেন নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনে দাঁড়ানোর মূল লক্ষ্যই থাকে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে আরও লুটপাট কীভাবে করা যায় সেদিকে। এসবের একটা সিস্টেম দাঁড়িয়ে গেছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, দেশে আইনের বৈষম্যের কারণেই এমন সিস্টেম আজ বীরদর্পে প্রচলিত হয়ে আছে। তাছাড়া দেশে দুর্নীতি ও অনিয়মের মামলায় উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ার ফলে এসব রাষ্ট্রে ছেয়ে আছে। কেননা, যারাই দুর্নীতি আর অনিয়মের মামলায় অভিযুক্ত হোন তারা সকলেই রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে প্রভাবশালী, ক্ষমতাশালী। কিছুদিন মামলা মোকদ্দমায় হয়রানি শেষে আবার স্বস্থানে ফিরে যান, চলতে থাকে পুনঃউদ্যোমে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৪
আপনার মতামত জানানঃ