জি-৭ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বৈশ্বিক টিকাদান কর্মসূচি কোভ্যাক্স গ্লোবাল কোভিড-১৯ প্রোগ্রামে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। করোনা সংকট ও তার অর্থনৈতিক পরিণতির মুখে প্রায় গোটা বিশ্ব যখন দিশাহারা হয়ে পড়েছে, তখনই শিল্পোন্নত দেশগুলির গোষ্ঠী জি-সেভেনের শীর্ষ নেতারা আবার বৈঠকে বসছেন৷ এমন অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে তাদের দাওয়াই কী হবে, তা জানতে অপেক্ষা করে আছে গোটা বিশ্ব৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন এই প্রথম জি-সেভেন বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন৷
১৯ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য টিকা উৎপাদন, সরবরাহ ও বণ্টনের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গড়ে তুলতে আগ্রহী৷
কোভ্যাক্স প্রকল্প হচ্ছে ডব্লিউএইচও-এর নেতৃত্বাধীন একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সস্থা (ডব্লিউএইচও) ছাড়াও উদ্যোগটির সঙ্গে রয়েছে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন ও দাতব্য সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। এর লক্ষ্য হলো-কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন মজুত করে না রেখে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সর্বোচ্চ ঝুঁকির দেশগুলোতে তা বণ্টন করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে উৎসাহিত করা।
কোভ্যাক্স এর মাধ্যমে সকল দেশের অত্যন্ত ঝুঁকিপূণ ২০ শতাংশ লোকের জন্য করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ করার উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। কয়েকটি ধনী দেশের সহায়তায় দরিদ্র দেশগুলোতে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে।
করোনা মহামারির কারণে এখনো পর্যন্ত গোটা বিশ্বে প্রায় ২৪ লাখ মানুষের মৃত্যু এবং শান্তিকালীন সময়ে অর্থনীতি সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে৷ প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে প্রত্যেকটি দেশ ঘর সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও এবার বৃহত্তর চিত্রের দিকে নজর দেবার সময় এসে গেছে বলে অনেক নেতা মনে করছেন৷ এমন প্রেক্ষাপটে বাইডেন আন্তর্জাতিক সংকটের জবাব হিসেবে যৌথ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পক্ষে সওয়াল করছেন৷
করোনা সংকটের কারণে লন্ডনে জি-সেভেন শীর্ষ বৈঠকেও নেতারা সশরীরে হাজির থাকতে পারছেন না৷ তারা ভার্চুয়াল টেবিলে হাজির হয়ে আলোচনা করবেন৷ বাইডেন ছাড়াও ইটালির নতুন প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগির উপস্থিতি বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করছে৷ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাক্তন প্রধান হিসেবে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তাঁর অভিজ্ঞতা বাকি নেতাদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ধনী পশ্চিমা দেশগুলির কোভিড-১৯ টিকার ভাণ্ডারের তিন থেকে পাঁচ শতাংশ আফ্রিকার জন্য বরাদ্দ করার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ টিকার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বৈষম্য দূর করার উপর জোর দিয়েছেন তিনি৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও সেই লক্ষ্যে এক ইউরোপীয় উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বলে মাক্রোঁ দাবি করেন৷ জি-সেভেন আয়োজক দেশ হিসেবে ব্রিটেনও আন্তর্জাতিক উদ্যোগের ডাক দিচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মহামারি সংক্রান্ত এক আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রস্তাব পেশ করেছেন৷ এর আওতায় ভবিষ্যতে কোনো মহামারি দেখা দিলে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে৷
এর আগে (১৭ ফেব্রুয়ারি) মহামারি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বণ্টন প্রক্রিয়া নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। মহাসচিব বলেন, বিশ্বের ধনী ১০ রাষ্ট্র ভ্যাকসিনের ৭৫ শতাংশই কব্জা করেছেন যার বিপরীতে এখনো ১৩০টি দেশ ভ্যাকসিনের ছোঁয়াও পায়নি। এই কঠিন মূহূর্তে ভ্যাকসিন সমতাই বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য টিকা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গঠন করা কোভ্যাক্স কর্মসূচি ইতোমধ্যে প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে একই সময়ে ধনী দেশগুলো টিকাদান শুরু করতে সক্ষম হয়েছে। বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশ ইতোমধ্যে কোভ্যাক্স কর্মসূচির টিকার জন্য অপেক্ষা না করেই তা কেনার জন্য প্রাইভেট চুক্তি স্বাক্ষর করতে ছুটছে।
সকল দেশে ভ্যাকসিনের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে একটি বৈশ্বিক ভ্যাকসিন প্রয়োগ পরিকল্পনার আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেস। এতে বিজ্ঞানী, ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও অর্থ প্রদানকারীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭০২
আপনার মতামত জানানঃ