স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ তাকে বলেছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। এই সরকার আরও পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকুক।’ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ থানা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
দেশের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বলছে, আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। রাস্তার পাশ থেকে মানুষ বলছে, স্যার আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকেন।’
পুলিশের কর্মতৎপরতার বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশের কর্মতৎপরতা আগের চেয়ে অনেকে বেড়েছে এবং আরও বাড়বে।’
এসময় তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে আমাদের থানাগুলো থেকে অনেক হাতিয়ার হারিয়েছে। এগুলো উদ্ধারের জন্য কাজ চলছে। হারানো হাতিয়ার উদ্ধার হলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো উন্নতি হবে।
ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের অপরাধীদের আনার যে চুক্তি আছে সেটার আলোকে ফেরত আনার চেষ্টা চলবে।
বাংলাদেশে চলমান ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাস পূর্ণ হতে চলেছে। এই সময়ে সাধারণ মানুষ কী ভাবছে? জনমত নানা রকম—কেউ সন্তুষ্ট, কেউ আশাবাদী, আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন গণতন্ত্র ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে। তবে মানুষ কী চাইছে, চলুন জানা যাক।
রাজধানী থেকে গ্রামের বাজার—অনেকেই বলছেন, আগে যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গিয়েছিল, এখন তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে।
একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, “আগে চাল-ডাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হইতো, এখন অন্তত নাগালের মধ্যে আছে। ইউনূস সাহেব ভালো দিচ্ছেন।”
এক নারী শিক্ষিকা জানান, “এবারের রমজান অনেকটা শান্তিতে গেল। ঈদের সময় যানজট ছিল না, ছেলেমেয়েদের নিয়ে নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে পেরেছি।”
সবাই অবশ্য একমত নন। কেউ কেউ বলছেন, সরকার যতই ভালো করুক, নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধ সরকার না হলে জনগণের আস্থা তৈরি হয় না।
এক তরুণ বলেন, “আমরা ভোট চাই। যারাই আসুক, ভোটে আসুক। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কেউ টিকে থাকতে পারে না।”
এক বৃদ্ধ কৃষক বলেন, “আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত—যেই আসুক, আসুক নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা আর অস্থিরতা চাই না।”
অনেকেই ড. ইউনূসের প্রশাসনিক দক্ষতা ও শান্তভাবে দেশ পরিচালনার জন্য তাকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন।
এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, “এই অল্প সময়ে যে ঋণ পরিশোধ হয়েছে, দেশের ইমেজ কিছুটা ফিরেছে, সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।”
এক শিক্ষার্থী বলেন, “ড. ইউনূস রাজনীতির লোক না, তাই তাকে বিশ্বাস করা যায়। ওনার মতো সৎ মানুষ যদি পাঁচ বছর চালান, অনেক কিছু বদলাবে।”
তবে শুধু প্রশংসা নয়, কোথাও কোথাও সমালোচনাও শোনা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, স্থানীয় সরকার না থাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী ভাতাবঞ্চিত হচ্ছে।
এক নারী বলেন, “আমি প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে আসি ইউনিয়ন অফিসে, কিন্তু কয় মাস ধরে কোনো ভাতা পাই না। চেয়ারম্যান নাই, অফিস বন্ধ। কে শুনবে আমাদের কথা?”
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও অনেকে মত দিয়েছেন। কারও কারও মতে, দেশের সুশাসনের জন্য ইসলামিক শাসনের প্রয়োজন।
এক প্রবীণ হুজুর বলেন, “এই জাতি বদলাতে হলে ইসলামী শাসন দরকার। আজকের দুর্নীতি, অবক্ষয়, সব কিছুর সমাধান সেখানে।”
অন্যদিকে, এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন, “ড. ইউনূস চাইলে রাজনৈতিক দল গঠন করে ভোটে আসতে পারেন। তখন আমরা তাকে ভোট দিতে পারব। এখন তিনি অরাজনৈতিক হলেও দেশের হাল ধরেছেন—এই অভিজ্ঞতা রাজনীতিতে কাজে লাগাতে পারেন।”
আজকের বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের চাওয়া একটাই—শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন। কেউ সেটা চান নির্বাচনের মাধ্যমে, কেউ চান ভালো নেতৃত্ব থাকলেই হোক।
ড. ইউনূসের সরকার আরও কিছুদিন থাকা উচিত কি না—এ নিয়ে মতভেদ থাকলেও এটা স্পষ্ট, মানুষ এখন সচেতন, তারা পরিবর্তন চায়, তারা সুশাসন চায়।
আপনার মতামত জানানঃ