প্রাচীন ইউরোপীয়দের হাড় পরীক্ষা করে প্রত্নতত্ত্ববিদরা মস্তিষ্ক ও অস্থি মজ্জা অপসারণের চিহ্ন ও কাটার দাগ খুঁজে পেয়েছেন। প্রথমদিকে গবেষকেরা মনে করছিলেন, হয়ত এটি কোনো ধর্মীয় আচার হতে পারে। অনেক আদিম সমাজে বিশ্বাস ছিল, মৃতদের দেহ ভস্ম বা মস্তিষ্ক গ্রহণ করলে তাদের আত্মা জীবিতদের সঙ্গে থেকে যায়।
হাজার হাজার বছর আগে ইউরোপের একদল মানুষ শত্রুর মস্তিষ্ক ও অস্থিমজ্জা খেত— সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ফ্রান্স, স্পেন ও পোল্যান্ডের প্রত্নতত্ত্ববিদরা এগারো থেকে সতেরো হাজার বছর আগের ম্যাগডালেনিয়ান সংস্কৃতির অন্তত ১০ জন মানুষের হাড় পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেগুলোতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে।
নতুন গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে। এতে বলা হয়েছে, এ আচরণ সম্ভবত যুদ্ধের পর প্রতিশোধমূলক নরখাদকতা ছিল।
প্রথমদিকে গবেষকেরা মনে করছিলেন, হয়ত এটি কোনো ধর্মীয় আচার হতে পারে। অনেক আদিম সমাজে বিশ্বাস ছিল, মৃতদের দেহ ভস্ম বা মস্তিষ্ক গ্রহণ করলে তাদের আত্মা জীবিতদের সঙ্গে থেকে যায়।
কিন্তু গবেষণার প্রধান লেখক ফ্রান্সেস মার্জিনেদাস বলেছেন, এখানে অন্য ম্যাগডালেনিয়ান সাইটের মতো ধর্মীয় রীতি অনুসরণের প্রমাণ নেই। এছাড়া স্কাল কাপের (খুলি দিয়ে তৈরি পানপাত্র) মতো ধর্মীয় নিদর্শনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই এটি নিশ্চিত যে এই রীতি কোনো ধর্মীয় আচার ছিল না। বরং শত্রুর প্রতি নিষ্ঠুর প্রতিশোধ হিসেবেই প্রাচীন ইউরোপীয়রা এমনটা করত।
গবেষকরা পোল্যান্ডের মাসজিকা গুহায় পাওয়া হাড় পরীক্ষা করেছেন, যা কয়েক দশক ধরে বিশ্লেষণের আওতায় ছিল। এবার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে তারা নতুন তথ্য পেয়েছেন। তারা ৬৮ শতাংশ হাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা কিংবা কেটে খোলার স্পষ্ট চিহ্ন পেয়েছেন। এই হাড়গুলো অন্তত ১০ জন মানুষের ছিল, যাদের মধ্যে ৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ৪ জন শিশু বা কিশোর।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, তারা আত্মীয় হতে পারে। তবে নিশ্চিত হতে ডিএনএ বিশ্লেষণ দরকার। তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাহু ও পায়ের হাড় কেটে খোলা হয়েছিল, যাতে অস্থিমজ্জা বের করে খাওয়া যায়।
গবেষণাটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন ক্যানিবালিজম বিশেষজ্ঞ বিল শুট। এই গবেষণাকে তিনি ‘খুব ভালোভাবে লেখা ও শক্তিশালী গবেষণা’ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু একে নিশ্চিতভাবে ক্যানিবালিজম বলতে নারাজ তিনি।
এছাড়া কিছু সংস্কৃতিতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে মৃতদেহের হাড় ভেঙে ফেলার রীতিও ছিল। তাই এটি ধর্মীয় রীতি ছিল নাকি প্রতিশোধ, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন বলে জানান তিনি।
অতীতে বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক খননে নরখাদকতার প্রমাণ মিলেছে। তবে এই গবেষণা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটি যুদ্ধকালীন নরখাদকতার প্রমাণের দিকে ইঙ্গিত দেয়।
গবেষকেরা বলছেন, মানব ইতিহাসের অনেক অধ্যায় এখনো অজানা। ভবিষ্যতে আরো উন্নত ডিএনএ বিশ্লেষণ ও ফসিল গবেষণা হয়তো এই রহস্যের চূড়ান্ত উত্তর দিতে পারবে।
প্রাচীন ইউরোপীয়রা কি সত্যিই প্রতিশোধ নিতে শত্রুর মস্তিষ্ক খেত? নাকি এটি ছিল তাদের কোনো প্রথা- সময়ের সঙ্গেই হয়ত মিলবে এর উত্তর
আপনার মতামত জানানঃ