দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ায় প্রাচীন সেচ খালের বিশাল ও ভালভাবে সংরক্ষিত পানি ব্যবস্থার খোঁজ পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
তাদের দাবি, পৃথিবীর শুরুর দিকের বিভিন্ন সভ্যতা কীভাবে কৃষিকাজের জন্য পানি ব্যবহার করত সে সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে এটি।
বর্তমানে ইরাকের বসরা শহরের কাছে এরিদু নামের অঞ্চলে এ পানি ব্যবস্থার সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। তারা বলছেন, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম দিকে এটি তৈরি হতে পারে।
এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ আল কাদিসিয়া’র প্রত্নতত্ত্বের একজন সহকারী অধ্যাপক ও ভূ-প্রত্নতাত্ত্বিক জাফর জোথেরি। তিনি বলেছেন, এ প্রাচীন পানি ব্যবস্থা বহু শতাব্দী ধরেই ছিল। ইউফ্রেটিস নদী থেকে নিজেদের জমিতে পানি আনতে এটি ব্যবহার করতেন মেসোপটেমিয়ার কৃষকরা।
এ আবিষ্কার প্রাথমিক বিভিন্ন সমাজ কীভাবে সফলভাবে খাদ্য উৎপাদনের জন্য নিজেদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল তা বুঝতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
মেসোপটেমিয়ার অন্যান্য অংশের তুলনায় এ অঞ্চলটি শুষ্ক ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল, যেখানে নতুন খাল ও নদীর পলির মধ্যে চাপা পড়ে গিয়েছে পুরানো সেচ ব্যবস্থা।
এ কারণে এরিদু’র প্রাচীন বিভিন্ন খাল ভালভাবে সংরক্ষিত রয়েছে, যা পৃথিবীর প্রাথমিক সময়ের কৃষিক্ষেত্র গবেষণার এক বিরল সুযোগ করে দিয়েছে গবেষকদের। সাতটিরও বেশি প্রাচীন খামারের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন চার হাজারেরও বেশি ছোট শাখা খাল শনাক্ত করেছেন তারা।
গবেষকরা বলছেন, এ সেচ ব্যবস্থা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার কৃষকদের রোমাঞ্চকর প্রকৌশল দক্ষতারই প্রকাশ ঘটিয়েছে। দক্ষতার সঙ্গে এসব পানি ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের চেহারা ব্যবহার করতেন তারা।
এজন্য নদীর উঁচু তীর ব্যবহার করে তারা পাশের জমিতে পানি দিতেন। জমিতে সমানভাবে পানি বণ্টনের জন্য এসব তীরে ছোট ছোট ফাটলও তৈরি করেছিলেন, যাকে বলা হচ্ছে ‘ক্রেভাস স্প্লে’।
এ ধরনের উন্নত সেচ ব্যবস্থা তৈরির জন্য অনেক শ্রম ও দক্ষতার প্রয়োজন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ সেচ ব্যবস্থাটি বিকশিত হয়েছিল, যার বিভিন্ন অংশ ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। গবেষকরা বলছেন, এ গবেষণাটি মেসোপটেমিয়ার কৃষিকাজের গভীর অনুসন্ধানের সূচনা মাত্র।
প্রাচীন সভ্যতার উদ্ভাবনী দক্ষতা ও পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে এ গবেষণা। হাজার হাজার বছর আগে তারা কীভাবে সেচের ব্যবহার করেছিলেন তা বোঝা আধুনিক পানি বণ্টনের জন্যও শিক্ষণীয় হতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ