২০২৫ সালের প্রথম ২ মাসে গণপিটুনির অন্তত ৩০টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৯ জন এবং আহত হয়েছেন ২০ জন।
২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে গণপিটুনির অন্তত ১ হাজার ৯টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৯২ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৭৬৫ জন। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চাইতে আরো বেশি হবে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।
সংস্থাটি জানায়, ২০২৫ সালের প্রথম ২ মাসে গণপিটুনির অন্তত ৩০টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৯ জন এবং আহত হয়েছেন ২০ জন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত ৭ মাসে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৪ জন। গত ১০ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান ছিল সবচেয়ে ভীতিকর। গত বছরে গণপিটুনির অন্তত ২০১টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৭৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৮৮ জন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এইচআরএসএস এ পরিসংখ্যান তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা আইনশৃঙ্খলার অবনতির চিত্রকেই তুলে ধরে। দিনের পর দিন এসব ঘটনা বাড়লেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করছেন এসব ব্যক্তি।
দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকারকর্মীদের সংগঠন সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের (সাহার) বাংলাদেশ ব্যুরো সদস্য সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা আইন প্রয়োগ ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার চিত্র তুলে ধরে। কয়েক বছর ধরেই এ আস্থাহীনতা বেড়েছে। তবে আস্থাহীনতার কথা বলে কোনো গণপিটুনিকেই সমর্থন করা যায় না।
সাঈদ আহমেদ বলেন, আস্থাহীনতা থাকলেও তা যথাযথ আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে ঠিক করা যায়, কিন্তু তা করা হয়নি। এর দায় সরকারের।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গণপিটুনির মতো এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে তিনটি কারণ আছে বলে মনে করেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, প্রথমত, এটি ঘটছে পরিকল্পিত উসকানির কারণে। সরকারের সহযোগী বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় কিছু ব্যক্তি এতে ইন্ধন জোগাচ্ছেন।
দ্বিতীয়ত, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা একটা বড় কারণ। হয়তো ইচ্ছা করেই এ বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। সর্বোপরি সরকারের উদাসীনতা ও কোনো পদক্ষেপ নিতে অনীহার কারণেই বেড়ে যাচ্ছে গণপিটুনির প্রবণতা।
অপরাধ–বিশ্লেষকদের মতে, অপরাধের শিকার হওয়ার আতঙ্ক থেকে মানুষ আইন হাতে তুলে নিতে পারে। সেটা ঠেকাতে অপরাধ দমাতে হবে। আবার যাঁরা আইন হাতে তুলে নেন, তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
গণপিটুনি আইনের দৃষ্টিতে ‘হত্যা’ এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হত্যাকারী হিসেবেই চিহ্নিত হন, এমনটাই মত দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক। তাঁর মতে, দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক পরিবেশ, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, প্রশাসনে অস্থিতিশীলতা ও ভীতি এবং আমলাতন্ত্রকে পরিচালনায় অদক্ষতাই গণপিটুনি বেড়ে যাওয়ার কারণ।
শাহদীন মালিক বলছিলেন, ‘গণপিটুনি এখন বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো প্রচেষ্টা সরকারিভাবে দেখছি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের চাকরি ও বদলি নিয়ে তটস্থ। আমলাতন্ত্র পরিচালনাও যথাযথ নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলছি না যে প্রশাসনের যেসব অপরাধী আছে, তাদের বিচার করা যাবে না। কিন্তু প্রশাসনিক শৃঙ্খলার এমন দুরাবস্থা থাকলে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়।’
আপনার মতামত জানানঃ