ইউরেনাসের ছোট চাঁদে বরফ পৃষ্ঠের নীচে লুকানো অবস্থায় থাকতে পারে সমুদ্র— এমনই তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। বিজ্ঞানীদের দাবি, দূরের ওই উপগ্রহ সম্পর্কে তাদের ধারণাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করেছে এ আবিষ্কার।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র মহাকাশ প্রোব ভয়েজার ২-এর ১৯৮৬ সালে তথ্য ব্যবহার করে এ আবিষ্কারটি করেছেন ‘জনস হপকিন্স অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স ল্যাবরেটরি বা এপিএল’-এর গ্রহ বিজ্ঞানী টম নর্ডহেইম ও তার গবেষণা দল এবং ‘ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ডেকোটা’র অধ্যাপক কালেব স্ট্রোম।
ইউরেনাস গ্রহটি প্রদক্ষিণের সময় মিরান্ডার দক্ষিণ গোলার্ধের ছবি ধারণ করে ভয়েজার ২। এ গবেষণায় মিরান্ডার পৃষ্ঠে অদ্ভুত সব বৈশিষ্ট্য খুঁজে দেখার জন্য কম্পিউটার মডেল তৈরি করেছেন গবেষকরা।
এটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘দ্য প্ল্যানেটারি সায়েন্স’-এ। গবেষণায় উঠে এসেছে, মিরান্ডার বরফের আবরণের নীচে বিশাল এক সমুদ্র থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মিরান্ডার পৃষ্ঠটি শৈলশিরা, ফাটল ও গর্তের সমন্বয়ে এক জোড়াতালির মতো দেখায়, যা কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। গবেষকদের দাবি, উপগ্রহটির এসব অনন্য বৈশিষ্ট্য হতে পারে জোয়ারের শক্তির কারণে। ইউরেনাস ও অন্যান্য নিকটবর্তী চাঁদ থেকে আসা মহাকর্ষীয় টানের ফলে মিরান্ডার পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে এমন উত্তাপ ও গতিবিধির ঘটনা ঘটতে পারে।
আরও গবেষণার জন্য মিরান্ডার পৃষ্ঠের ফাটল ও বিভিন্ন শৈলশিরার ম্যাপ করেছে গবেষণা দলটি। একইসঙ্গে উপগ্রহটির অন্যন্য এসব বৈশিষ্ট্যের ধরন বোঝার জন্য কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করেছেন তারা।
মডেল থেকে দেখা গেছে, ১০ থেকে ৫০ কোটি বছর আগে মিরান্ডার পৃষ্ঠের নীচে ছিল সমুদ্র। ৩০ কিলোমিটার পুরু বরফ স্তরের নীচে সমুদ্রটি প্রায় ও ১০০ কিলোমিটার চওড়া।
মিরান্ডার ব্যাসার্ধ মাত্র ২৩৫ কিলোমিটার। আর এত ছোট উপগ্রহের জন্য এই সম্ভাব্য সমুদ্র চাঁদটির প্রায় অর্ধেক দখল করে নিয়েছে, যা গবেষকদের কাছে একেবারে অপ্রত্যাশিত বিষয়।
গবেষণা দলটির অনুমান, এই সমুদ্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মিরান্ডার প্রতিবেশী চাঁদের জোয়ার-ভাটার শক্তি।
এসব চাঁদ যখন নির্দিষ্ট কক্ষপথে থাকে তখন এদের মহাকর্ষীয় বিভিন্ন টান ঘর্ষণের মাধ্যমে সমুদ্রকে ঠাণ্ডা হওয়া থেকে ঠেকাতে পর্যাপ্ত তাপ তৈরি করতে পারে। এর একটি পরিচিত উদাহরণ হচ্ছে, বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা। এখানে উপগ্রহটির বরফের পৃষ্ঠের নীচের সমুদ্রকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করেছে জোয়ার।
মিরান্ডার এই সমুদ্র হয়তো এখনও পুরোপুরি জমে যায়নি। যার মানে হচ্ছে, মিরান্ডার পৃষ্ঠের নীচে আজও তরল পানির একটি পাতলা স্তর থাকতে পারে, যা চাঁদটির ছোট আকার ও সূর্য থেকে দূরত্বের বিবেচনায় অসাধারণ এক বিষয়।
এর আগে মিরান্ডার ছোট আকার ও বয়সের কারণে এতে সমুদ্র থাকতে পারে বলে ধারণা করেননি বিজ্ঞানীরা। তাদের ধারণা ছিল, এর গঠনে কোনও তাপ অবশিষ্ট থাকলে তা অনেক আগেই বিলীন হয়ে যেত, এমনকি এটি বরফের জমাট বল হিসাবেও রয়ে যেত।
গ্রহ বিজ্ঞানী নর্ডহেইম বলেছেন, একসময় শনির চাঁদ এনসেলাডাসকেও ঠাণ্ডা বলে ধারণা করা হত। তবে নাসা’র ‘ক্যাসিনি’ মহাকাশযান আবিষ্কার করেছে, শনির চাঁদে রয়েছে সমুদ্র।
মিরান্ডাও একই পথ অনুসরণ করতে পারে। এখানে যদি সমুদ্র থাকে তবে তা পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব গবেষণার জন্য ভবিষ্যতের বিভিন্ন মিশনের ক্ষেত্রে রোমাঞ্চকর লক্ষ্য হতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ