গাজায় ক্রমশ বাড়তে থাকা সংঘাত নিয়ে অনলাইন দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের এক কোম্পানির পরিচালিত গোপন মিশনে ব্যঘাত সৃষ্টির দাবি করেছে মেটা ও ওপেনএআই।
টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো বলেছে, ‘স্টইক’ নামের তেল আবিবভিত্তিক এক রাজনৈতিক বিপণন ও ব্যবসায়িক গোয়েন্দা সংস্থা নিজেদের বিভিন্ন পণ্য ও টুল দিয়ে অনলাইনের রাজনৈতিক আলাপচারিতাকে প্রভাবিত করছে।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা ওপেনএআই বলেছে, তারা স্টইকের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের একটি নেটওয়ার্কে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে হামাস বিরোধী ও ইসরায়েলপন্থী কনটেন্ট পোস্ট করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। আর এরা ‘ইসরায়েলের ভাড়া করা সাইবার যোদ্ধা’ হিসেবে কাজ করছে।
অ্যাকাউন্টগুলো ওপেনএআইয়ের বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করে গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, এমনকি ভারতে চলমান নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এমনটি করেছে, তবে এর মাত্রা তেমন বেশি ছিল না।
“বিশেষ করে, এআই মডেলের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন এমন ‘নিবন্ধ ও মন্তব্য তৈরি করেছে, যেগুলো একাধিক প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা হয়, যেখানে প্রাধান্য পেয়েছে ইনস্টাগ্রাম, ফেইসবুক, এক্স ও মিশনটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সাইটগুলো,” এক ব্লগ পোস্টে বলেছে ওপেনএআই। এর মধ্যে রয়েছে গাজা যুদ্ধের মতো সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে লেখা বার্তাও।
এ ছাড়া, মিশনটিতে মানুষের সম্পৃক্ত হওয়ার জাল তথ্যও ছিল বলে অভিযোগ করেছে ওপেনএআই।
“আমরা যেসব কর্মকাণ্ড ঠেকিয়েছি তার মধ্যে কয়েকটি আমাদের এআই মডেল ব্যবহার করেছে। মেগুলো সোশাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা নিয়ে তথ্য ছড়িয়েছে।”
তবে ওপেনএআইয়ের তথ্য অনুসারে, নেটওয়ার্কটির কার্যক্রমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তেমন সাড়া মেলেনি। শুধু নিজেদের তৈরি করা জাল অ্যাকাউন্ট দিয়েই সম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে নেটওয়ার্কটি।
স্টইক নিজেদেরকে এমন একটি এআই কনটেন্ট তৈরির ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে, যা ‘কোনো নির্দিষ্ট বিষয়কে লক্ষ্য করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনটেন্ট তৈরির পাশাপাশি সেগুলোকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক প্ল্যাটফর্মে অর্গানিক উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে’ ব্যবহারকারীদের সহায়তা করে।
বুধবার নিজেদের প্রান্তিক নিরাপত্তা প্রতিবেদনে মেটা নিশ্চিত করেছে, তারা ফেইসবুক থেকে পাঁচশটির বেশি অ্যাকাউন্ট, একটি গ্রুপ ও ১১টি পেইজের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম থেকে ৩০টি অ্যাকাউন্ট সরিয়ে ফেলেছে, যেগুলোর সম্পৃক্ততা ছিল ওই একই মিশনের সঙ্গে।
কোম্পানিটি বলেছে, স্টইকের সঙ্গে সম্পৃক্ত গোপন প্রচারণার অংশ হিসেবে, সেইসব অ্যাকাউন্ট ইহুদি শিক্ষার্থী, কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ও অন্যান্য দেশের নাগরিকের ছদ্মবেশ ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দর্শকদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল।
“কন্টেন্ট তৈরির জন্য তারা কীভাবে সম্ভাব্য জেনারেটিভ এআই টুলিং ব্যবহার করে তার বেশ কিছু নজির মিলেছে এইসব নেটওয়ার্কে। সম্ভবত এটি তাদের দ্রুত প্রসার বা সম্পৃক্ততার মাত্রা বাড়ানোর সুযোগ দেয়। তবে এর ফলে আমাদের শনাক্ত করার সক্ষমতায় কোনো প্রভাব পড়েনি,” রয়টার্সকে বলেন মেটার ঝুঁকি তদন্ত বিভাগের প্রধান মাইক ডিভিলিয়ানস্কি।
ফেইসবুকের মালিক কোম্পানি মেটা বলেছে, তারা স্টইকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পাশাপাশি ‘তারা যেন মেটার নীতিমালা লঙ্ঘন করা কার্যক্রম অবিলম্বেই বন্ধ করে, সে দাবি তুলে’ তাদেরকে একটি চিঠিও দর্শানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডনেট স্টইকের মন্তব্য জানতে চাইলেও তাৎক্ষনিক সাড়া পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত জানানঃ