কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের(ইসি) বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দেশের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোও অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অপসারণের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এবার ইসিকে ঠেকাতে বিরোধীদলগুলোর সাথে ঐক্য করে বিএনপি নতুন কৌশল নিয়ে আগাচ্ছে। তারই অংশ হিসাবে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে ‘সর্বদলীয়’ উদ্যোগের কথা ভাবছে দলটি। ইতিমধ্যে কয়েকটি বাম দলের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। বর্তমান ইসির পদত্যাগের দাবিতে মাঠে থাকার পাশাপাশি বিরোধীদলগুলো নিয়ে ঐক্য গড়ার চেষ্টা চলছে। তা সফল হলে সব দল মিলে নতুন ইসি গঠনের জন্য একটি নামের তালিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজও শুরু করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বর্তমান ইসি গঠনের আগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে এবারও হয়তো তাই হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ, সার্চ কমিটি গঠন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম আহ্বান- এসব নতুন ইসি গঠনের ক্ষেত্রেও করা হবে। আর এ প্রক্রিয়া ধরে নিয়েই বিএনপি এগোচ্ছে।
তবে বিরোধী সব দল মিলে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নামের একটি তালিকা দেয়ার বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। কয়েকটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তবে এ উদ্যোগ প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বিএনপির মূলত চেষ্টা থাকবে বিরোধী সব দলকে এ ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ করে একসঙ্গে কাজ করা। সে উদ্যোগই দল থেকে নেয়া হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া যখন শুরু হবে তখন এ ব্যাপারে বলার সময় হবে। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে পুরোপুরি ব্যর্থ তা ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দল বলছে। তাদের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও কর্মসূচি পালন শুরু করে। এ ধরনের নির্বাচন কমিশন দেশের জনগণ আর দেখতে চায় না।
তিনি বলেন, অযোগ্যতার কারণে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সেই অভিজ্ঞতা নেই যে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। জাতীয় নির্বাচন গেছে, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো একইভাবে তারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। যদি ন্যূনতম কোনো লজ্জা থাকে, তাদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত। অন্যথায় এ দেশের মানুষ তাদের সরে যেতে বাধ্য করবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সংবিধানসম্মত নির্বাচন সর্বদলীয় মতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনের স্টেকহোল্ডার মূলত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে বিএনপি যদি সম্মিলিত কোনো নাম প্রস্তাব করে বা সে প্রস্তাবের ভিত্তিতে হয় তাহলে এ ধরনের প্রক্রিয়া গণতন্ত্রের জন্য একটা শক্ত পদক্ষেপ হবে এবং সেখানে সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার তো রাজনৈতিক নেতার মতো কথা বলেন। এ কমিশন কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু করতে পারেনি। পুরোপুরি ব্যর্থ এ কমিশন। এ রকমের অযোগ্যদের দিয়ে আবারও যাতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা না হয় সেজন্য সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। বিএনপি সে চেষ্টাই করছে।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন ইসি গঠনের প্রক্রিয়া অন্তত দেড় থেকে ২ মাস আগে শুরু হবে। দলের কাছে এ ইস্যুটি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকটি সভায়ও আলোচনা হয়েছে, নেয়া হয়েছে কিছু পরিকল্পনা। নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের বিচার জনতার আদালতে করা হবে মর্মে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, ‘জনতার আদালতে তিন হুদার বিচার হবে। একটি দেশের গণতন্ত্র নির্বাচনের মাধ্যমে সুসংহত হয়, কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনারকে সরকার কলুষিত করেছেন। আজ জনগণ তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ এ সময় দুলু আরো বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাকে নির্বাচন কমিশনার ধ্বংস করেছে। দেশে গণতন্ত্র বলে কিছুই নেই। জনগণ ভোট দেওয়ার আগে ভোট হয়ে যায়।
এর আগে নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুতর অসদাচরণ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অপসারণের দাবি জানিয়েছিলেন দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ তুলে ধরেছেন। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে— নির্বাচন কমিশনারদের বিশেষ বক্তা হিসেবে দুই কোটি টাকা গ্রহণ, নিয়োগের নামে চার কোটি আট লাখ টাকার দুর্নীতি, নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনটি করে গাড়ি ব্যবহার এবং ইভিএম কেনায় অনিয়ম। আর অসদাচরণের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) শপথ নেন। তাদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এরই মধ্যে নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে নানা ‘কৌশল’ নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি।
এসডব্লিউ/ডিজে/কেএইচ/১৪১৩
আপনার মতামত জানানঃ