বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে মানুষের ক্রমবিকাশে, এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
‘ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ’-এর নতুন এক গবেষণায় বলা হয়, ‘হোমিনিন’ প্রজাতির উন্নতি বা বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়টি শুধু জলবায়ু নয়, বরং এরা কাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে ছিল সে বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িত।
বেশিরভাগ প্রাণীর ক্ষেত্রে, পৃথিবীতে নিজের জায়গা খুঁজে পাওয়ার অর্থ হল, নির্দিষ্ট কোনও ভূমিকা পূরণ করা। যেমন– ডারউইনের বর্ণনায় পাওয়া ফিঞ্চ পাখিরা বিভিন্ন খাবার খাওয়ার জন্য নিজেদের ঠোঁটকে অভিযোজিত করেছিল।
প্রাণীদের এমন ভূমিকা পালন করার সময় অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা আরও জোরালো হয়। এতে করে বিভিন্ন নতুন প্রজাতির উত্থানের জন্য সংগ্রাম করে ও অন্যরা বিলুপ্তির মুখে পড়ে যায়। আর এ বিষয়টি পাখি থেকে শুরু করে স্তন্যপায়ী বেশিরভাগ প্রাণীর জন্যই সত্য।
তবে, মানুষের ক্ষেত্রে বিষয়টি কেমন? বিশেষ করে হোমো সেপিয়েন্স? মানুষদের গল্পটা বেশ অস্বাভাবিক। বেশিরভাগ প্রজাতি এমন একটি অবস্থায় পৌঁছে যেখানে নতুন প্রজাতি বংশবৃদ্ধি বন্ধ করে দেয় ও বিলুপ্তির হার বৃদ্ধি পায়। তবে, হোমোর ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারে ভিন্ন।
যত বেশি হোমো প্রজাতি ছিল, তত বেশি নতুন প্রজাতির আবির্ভাব হয়েছে— যেটি বিবর্তনীয় কাহিনিতে এক অদ্ভুত মোড়।
বিষয়টিকে এমন এক দ্বীপ হিসেবে কল্পনা করা যেতে পারে, যা বিভিন্ন ধরনের গুবরে পোকায় পূর্ণ। আর ওই দ্বীপে যত বেশি গুবরে পোকা আবির্ভূত হবে, নতুন প্রজাতি সৃষ্টির হার কমে আসার পরিবর্তে বেড়ে যাবে। হোমো প্রজাতির ক্ষেত্রেওই ঠিক একই রকম ঘটেছে।
আর এ ধরনটি এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা ড. লরা ভ্যান হোলস্টেইনের মতো গবেষকদের বিভ্রান্ত করেছে। এরা লাখ লাখ বছর ধরে কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তা বুঝতে ‘হোমো ইরেক্টাস’ ও ‘হোমো হ্যাবিলিসের’ মতো হোমিনিন প্রজাতির জীবাশ্ম পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকরা।
এইসব জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে গবেষকরা শনাক্ত করেছেন, প্রতিটি প্রজাতি কখন আবির্ভূত হয়েছিল ও কখন পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিল।
তবে, জীবাশ্ম খুঁজে বের করা বেশ জটিল। কখনও কখনও নির্দিষ্ট সময় বা স্থান থেকে এমন জীবাশ্মের খোঁজ না-ও মিলতে পারে, যেটি থেকে কোনও প্রজাতির জীবনকাল ঠিকঠাক বোঝা যাবে। ড. ভ্যান হোলস্টেইন এইসব ফাঁক পূরণ করে এদের স্পষ্ট দৃশ্যপট তুলে ধরতে বিভিন্ন চতুর কৌশল ব্যবহার করেছিলেন।
চমকপ্রদভাবে গবেষকরা খুঁজে পান, কিছু প্রজাতি অন্যদের মতো ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয়নি, যা আগের প্রচলিত ধারণা। এর পরিবর্তে, নতুন প্রজাতি এর মূল প্রজাতি থেকে আলাদা হয়ে যায়, ঠিক যেমন গাছে নতুন শাখা গজায়। এর মানে, একই সময়ে আরও অনেক প্রজাতি সহাবস্থান করেছে, সম্ভবত টিকে থাকার মতো বিভিন্ন উপাদান নিয়ে প্রতিযোগিতা করার মাধ্যমে।
তাহলে, নতুন হোমো প্রজাতির এমন ভিন্ন আচরণের কারণ কী? এখানে বড় ভূমিকা আছে প্রযুক্তির, যেখানে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় সরঞ্জাম ও শিকারের নানা কৌশল রপ্ত করার ক্ষেত্রে বেশ চতুর ছিল হোমো প্রজাতি। আর এটি তাদের নতুন পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাওয়ানো ও নিজস্ব আশ্রয় তৈরির ক্ষেত্রেও সহায়তা করেছে।
পরবর্তীতে আগমন ঘটে হোমো সেপিয়েন্সের, যারা চূড়ান্ত ‘জেনারেলিস্ট’ বা ন্যায়বিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তি। উন্নত প্রযুক্তি ও মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতার কারণে মানুষ অন্যান্য হোমো প্রজাতিকে ছাপিয়ে গেছে। বিষয়টি এমন যে, বিবর্তনের ক্ষেত্রে মানুষ ছিল ‘সুপারহিরো’, যারা যে কোনো পরিবেশে দাপিয়ে বেড়াতে সক্ষম।
এ গবেষণাটি থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায়। যেমন, প্রতিযোগিতা ছিল মানব বিবর্তনের চালিকা শক্তি। আর মানুষের গল্পও প্রাণীজগতের অন্য যে কোন গল্পের চেয়ে আলাদা
আপনার মতামত জানানঃ