নৌপথের বিভিন্ন জায়গায় পণ্যবাহী জাহাজ থেকে সরকারি লোকেরা চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ এনেছেন নৌযান মালিকরা। সরকারি লোকদের মধ্যে রয়েছেন নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর । তাদের নামে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নৌযান মালিকরা। এছাড়া চাঁদা না দিলে হয়রানিমূলক মামলা দেয়া থেকে শুরু করে শ্রমিকদের মারধর পর্যন্ত করা হয়।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নৌযান ব্যবসা সমৃদ্ধি ঐক্য পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এসব চাঁদাবাজি বন্ধসহ ছয় দফা দাবি জানান তারা। অন্যথায় আন্দোলনে যাওয়ারও ঘোষণা দেন মালিকরা।
বাংলাদেশ কার্গো ভেসেলওনার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রম, কোস্টাল শিপ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবির, জাহাজ মালিক মো. খুরশীদ আলম, রাকিবুল আলম দিপু, ইঞ্জিনিয়ার বোরহান, লক্ষণ চন্দ্র ধর, মাসুদ করিম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রম বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নৌ-পথের বিভিন্ন জায়গায় নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নামে চাঁদাবাজি হয়। আবার অনেক নেতা বা বিভিন্ন কমিটির নামেও চাঁদা তোলা হয়। এ টাকা মালিকদের বহন করতে হয়। তাই ব্যবসায় টিকে থাকা এখন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ছে।
কোন পয়েন্টে কে কত টাকা চাঁদাবাজি করে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা আসেন, আমরা দেখিয়ে দেব। কিন্তু এখানে এভাবে বলা সম্ভব না।
মেহবুব কবির বলেন, চট্টগ্রামে যেসব জাহাজ পণ্য আনতে যায় সেগুলো থেকে কাগজ পরীক্ষার নামে ৫-১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। সেখানে জাহাজের মাস্টার-ড্রাইভাররা চাঁদা দিতে বাধ্য হন। চাঁদা না দিলে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। বালিবাহী বাল্কহেডে পণ্য পরিবহনের কথা না। কিন্তু বাল্কহেডে পণ্য পরিবহন করা হয়। এসব নৌযানের কোনো ধরনের কাগজপত্র (রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ও বে-ক্রসিং সনদ) নেই। অথচ ওইসব বাল্কহেডের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের বহিঃনোঙ্গরে থাকা মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসের কাজ হাতে গোনা কয়েক এজেন্টের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) সিরিয়াল ভাঙ্গার কারণে অনেক জাহাজ মালিক চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের অনিয়মের কারণে কোনো জাহাজ ঘনঘন ট্রিপ পাচ্ছে। আবার কেউ মাসের পর মাস অলস বসে থাকছে।
নৌ সেক্টরের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি অশুভ চক্র পণ্যবাহী নৌযান ব্যবসা কুক্ষিগত করার জন্য সূক্ষ্মভাবে কাজ করছে। এ সমস্যার অন্তর্নিহিত কারণ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্মানজনক সমাধান না করলে পণ্যবাহী নৌযান পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। আগামী তিন মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে সারাদেশে নৌ ধর্মঘট ডাকার হুঁশিয়ারি দেন মাহবুব উদ্দীন। একইসঙ্গে নৌ বন্দর কেন্দ্রীক ৬ দফা দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া ছয় দফা দাবিগুলো হচ্ছে-চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে অবৈধ বাল্কহেড এবং ডব্লিউটিসির নিয়মের বাইরে সিরিয়ালবিহীন জাহাজ চলাচল বন্ধ করতে হবে। জাহাজে দুজন মাস্টার ও ড্রাইভার রাখার প্রথা বাতিল করতে হবে। ৫০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে জাহাজ সচল থাকা পর্যন্ত সমুদ্রপথে চলার অনুমতি (বে-ক্রসিং) দিতে হবে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নগরবাড়ী ও খুলনার নোয়াপাড়া রুটের নদী ড্রেজিং করতে হবে। পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, নৌযান মালিকদের অভিযোগ অবশ্যই পাতে তোলার মতো। সড়কপথের চাঁদাবাজি নিয়ে গণমাধ্যম সরব থাকলেও নৌপথের চাঁদাবাজি একরকম আড়ালেই পড়ে থাকে। নৌপথে মোটা অংকের চাঁদাবাজির ঘটনা নিয়ে তেমন একটা আলোচনায় আসে না। নীরবে সরকারি সংস্থার লোকেরা নিজেদের পকেট ভারী করছেন। পণ্যবাহী জাহাজ থেকে শুরু করে মালবাহী যেকোনো ট্রলার পর্যন্তও সরকারি লোকদের চাঁদাবাজির থাবা থেকে রেহাই পায় না বলে জানান তারা। এসব রোধে অথবা প্রতিকারেও বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেই বলে জানান তারা। এমনকি নৌপথে মিডিয়ার উপস্থিতি সংক্রান্ত জটিলতায় চাঁদাবাজিরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নৌপথ নিজেদের দখলে নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলো নিজেদের মতো করে শাসন করছে। এব্যাপারে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন তারা। একইসাথে নৌপথে পণ্যবাহী জাহাজগুলো যেন নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সেবিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৫
আপনার মতামত জানানঃ