ইটপাটকেল নিক্ষেপের জবাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে রাজধানী ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কে অবরোধ সৃষ্টিকালে এ ঘটনা ঘটে শনিবার।
পুলিশ বলেছে, এ সময়ে বিএনপি’র সমর্থকরা বাসে আগুন দিয়েছে এবং পেট্রোল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বিএনপি’র দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং আগামী নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
দুর্নীতির অভিযোগে দলটির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালে জেল দেয়ার পর গত কয়েক মাসে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। এর মধ্যে শুক্রবারের বিক্ষোভে অংশ নেন লাখো জনতা।
বিএনপি’র বিক্ষোভ নিয়ে এসব কথা লিখেছে বিদেশি মিডিয়া। এর মধ্যে আছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, আল জাজিরা, আনাদোলু। আল জাজিরা লিখেছে- বিএনপি শনিবার বলেছে, তাদের কয়েক ডজন সমর্থক আহত হয়েছেন এদিন। অন্যদিকে পুলিশ বলেছে, তাদের কমপক্ষে ২০ সদস্য সংঘর্ষে আহত হয়েছেন।
ওদিকে বিএনপি’র দু’জন সিনিয়র নেতাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের ভূমিকাকে অন্যায় বলে নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি’র সিনিয়র নেতা আবদুল মঈন খান।
তিনি বলেছেন, শনিবার যে অভিযান চালানো হয়েছে তাতে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব নিশ্চিতভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তারা যে আগামী নির্বাচন জালিয়াতির সঙ্গে করতে চায় সেই উদ্দেশ্যই পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি বলেছেন, জনগণের সমাবেশ করার যে মৌলিক অধিকার তা খর্ব করছে পুলিশ। অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ফারুক আহমেদ বলেছেন, কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তারা শুধু যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদেরকে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়তে হয়েছে।
টিভি ফুটেজে দেখা গেছে রাজপথে বিক্ষোভকারীদের প্রহার করতে লাঠি ব্যবহার করছে পুলিশ। সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সরকারের দমনপীড়নের সমালোচনা করেছে পশ্চিমা দেশগুলো ও অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো।
অ্যামনেস্টি ইনটারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক ক্যাম্পেইনার ইয়াসাসমিন কাভিরত্নে এ মাসের শুরুতে বলেছেন, বাংলাদেশে উত্তেজনা যেভাবে বাড়ছে তা এলার্মিং। জনগণকে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে এবং ভিন্ন মত প্রকাশ করার অনুমতি দেয়া উচিত।
তাদের কণ্ঠকে চেপে ধরে সরকার এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দেশের ভেতর ভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সহ্য করা হবে না। তিনি পুলিশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন আওয়ামী লীগের এমপি তানভীর শাকিল জয়। তিনি বলেছেন, বিএনপি এবং এর সঙ্গে থাকা মিত্র দলগুলো কমপক্ষে সাতটি বাসে আগুন দিয়েছে।
মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেছে। তারপরই পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। কারণ, জনগণের চলাচলের অধিকার লঙ্ঘনের অধিকার নেই কোনো রাজনৈতিক দলের।
অন্যদিকে আনাদোলু লিখেছে, শনিবার প্রধান বিরোধী দল দাবি করেছে পুলিশ তাদের কমপক্ষে একশত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আহত করেছে অনেককে। তাদের দিকে ছোড়া হয়েছে বুলেট। পুলিশের একটি ও তিনটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করা হয়েছে।
এর জন্য ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীরা একে অন্যকে দায়ী করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও এবং টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার বিক্ষোভে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। তারপর তাকে আটক করেছে। পরে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
গত দুটি নির্বাচন ব্যাপক জালিয়াতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা।
বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসের ১৪ জন কংগ্রেসম্যান জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি লিখেছেন। তাতে জাতিসংঘের অধীনে এবং নির্দলীয় ব্যবস্থায় বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে একে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ সরকার।
ওদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে রাজধানী ঢাকার বড় বড় সড়কে অবরোধ সৃষ্টিকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের। অবরোধ সৃষ্টিকারীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপের জবাবে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ।
বিএনপি’র সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আমানউল্লাহ আমানকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। শনিবারের কর্মসূচিতে রাজধানীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অংশের পরিবহন যোগাযোগ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়।
এদিন বাস-ট্রাক আটকা পড়ে বিভিন্ন স্থানে। বছরের শুরু থেকেই বিএনপি’র প্রতিবাদ বিক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মাসে তাদের বিক্ষোভে লাখো মানুষ যোগ দেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ বিরোধী দলের কমপক্ষে ৫০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এ সপ্তাহে।
এসডব্লিউ/এসএস/২১৪০
আপনার মতামত জানানঃ