মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে এসে পড়া একটি উল্কা থেকে এক দারুণ বস্তু আবিষ্কারের দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল জ্যোতির্বিদ। আর সেটি হলো, এলিয়েনের প্রযুক্তির একটি অংশবিশেষ। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ বলছে, এ নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা।
২০১৪ সালে পাপুয়া নিউগিনির সমুদ্র উপকূলে একটি উল্কার পতন হয়। গবেষণার জন্য সেই উল্কার কিছু অংশবিশেষ এনেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আভি লোয়েভ।
আভি লোয়েভ দলবল নিয়ে গবেষণা করে এবার দাবি করছেন, সেখানে এলিয়েনের কোনো প্রযুক্তির অংশবিশেষ রয়েছে।
এরই মধ্যে আরও পর্যালোচনা করার জন্য উল্কার এসব অংশ গবেষণাগারে নিয়ে গেছেন দলটি। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ কমান্ড বলছে, উল্কার এসব অংশবিশেষ অন্য কোনো সৌরজগতের।
সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডে বলছে, ২০১৪ সালে যে উল্কা পড়েছিল, তা একটি বাস্কেটবলের সমান। লোয়েভ জানান, সাধারণত অন্য কোনো সৌরজগৎ থেকে কোনো উল্কা এলে সেটি আমাদের সৌরজগতের উল্কার দ্বিগুণ গতিতে আসে।
এদিকে, এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় বিজ্ঞানীরা। তবে কোনো কোনো মহাকাশবিজ্ঞানী এলিয়েনের অস্তিত্ব ধরে নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের একটি অংশ মনে করছেন, অনেকগুলো গ্রহ থেকে পৃথিবীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারে এলিয়েনরা। এমন ২৯টি গ্রহ চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশবিজ্ঞানীদের হিসাব বলছে, প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে বা বাসযোগ্য এই গ্রহগুলো থেকে পৃথিবীর কক্ষপথ দেখা সম্ভব। এমনকি মানুষের তারবিহীন যোগাযোগে অনুপ্রবেশ করাও সম্ভব।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পৃথিবীর ওপর নজরদারি সম্ভব, এমন কয়েকটি সৌরজগতের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা ধরে নিয়েছেন, সেসব সৌরজগতে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। এ ধারণাকে কেন্দ্র করে সৌরজগতগুলোর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা বিশেষ কিছু গ্রহও চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে বুধবার প্রকাশ হয় মূল গবেষণা প্রতিবেদনটি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সত্যিই এলিয়েন থাকলে অবস্থানগত সুবিধার কারণে গ্রহগুলো থেকে তারা পৃথিবীতে প্রাণের চিহ্ন শনাক্ত করতে পারে।
ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার গায়া ক্যাটালগ বিশ্লেষণ করেছেন নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির কার্ল সাগান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও মহাকাশবিজ্ঞানের অধ্যাপক লিসা কাল্টেনেগার এবং আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. জ্যাকি ফাহের্টি।
তারা পৃথিবীর ৩২৬ আলোকবর্ষের মধ্যে অবস্থিত ২ হাজার ৩৪টি সৌরজগৎ চিহ্নিত করেছেন, যেগুলো থেকে পৃথিবীর অস্তিত্ব বোঝা সম্ভব।
চেনা সৌরজগতের বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে এমন ১ হাজার ৭১৫টি সৌরজগৎ আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছেন তারা।
বিজ্ঞানীদের মতে, এলিয়েনের ধারণা বাস্তব হলে দেড় হাজারের বেশি সৌরজগতের কোনোটি থেকে হয়তো গত ৫ হাজার বছরের কোনো সময় পৃথিবীকে সূর্যের ধারেকাছে আবিষ্কার করেছে ভিনগ্রহের প্রাণীরা। আবার পৃথিবীর কক্ষপথ শনাক্ত সম্ভব এসব সৌরজগতের মধ্যে এমন ৪৬টি আছে, যেগুলোতে মানুষের অস্তিত্ব চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত গ্রহ আছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত প্রায় ১০০ বছর ধরে তথ্য আদান-প্রদানে রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেটসহ তারবিহীন যোগাযোগের অনেক পথ তৈরি করেছে মানুষ।
এই ৪৬ সৌরজগতের বিশেষ কিছু গ্রহ থেকে এলিয়েনদের পক্ষে মানুষের এই তারবিহীন যোগাযোগে সহজেই আড়ি পাতা সম্ভব। গবেষকদের মতে, রস ১২৮, ট্র্যাপিস্টসহ এ ধরনের গ্রহের সংখ্যা ২৯টি।
লিসা কাল্টেনেগার বলেন, ‘গ্রহ আবিষ্কারের একটা উপায় হলো বিভিন্ন তারা থেকে পৃথিবীর দিকে আলো আসার কোনো পথ বন্ধ বলে বোঝা যাওয়া।’
শক্তিশালী অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পৃথিবীর সৌরজগতের বাইরে হাজার হাজার গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এগুলোর ৭০ শতাংশই আবিষ্কৃত হয়েছে এমন সময়, যখন সেসব গ্রহ নিজেদের সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবীতে আলো পৌঁছানোর পথে বাধা দিয়েছে।
মূলত এ রকম গ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবীকে সহজে লক্ষ্য করার মতো অবস্থানে কোনগুলো আছে, সেগুলো শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১১১০
আপনার মতামত জানানঃ