বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান বব গুড। তিনি ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ৫ম কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান।
শুক্রবার বব গুডের ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে হাজার হাজার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু এর জবাবে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গ্রেপ্তারের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের দমন করছে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে লেখা এক চিঠিতে ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এক বছরেরও বেশি সময় আগে র্যাবকে একটি ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য নৃশংসতার জন্য দায়ী একাধিক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এরপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে হাসিনা সরকার বাংলাদেশের জনগণের উপর তার পদ্ধতিগত দমন-পীড়ন আরও তীব্র করেছে।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, নিজস্ব জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধের পাশাপাশি শেখ হাসিনার অসদাচরণ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য খারাপ রাজনীতিবিদদেরও এক হতে উৎসাহিত করছে। তারা একত্রিত হয়ে চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ট হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আঘাত করছে। বব গুডের দেয়া বিবৃতিতে গত ২৫শে মে বাইডেনের কাছে পাঠানো ওই চিঠিটি যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের একজন হচ্ছেন বব গুড। এছাড়া এতে আরও স্বাক্ষর করেন, কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি, ব্যারি মুর, টিম বারচেট, ওয়ারেন ডেভিডসন এবং কিথ সেল্ফ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাক্টিসেস: বাংলাদেশ’ শীর্ষক মার্কিন এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দাবি, ‘নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ভর্তি, বিরোধী দলের এজেন্ট এবং ভোটারদের ভয় দেখানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে পর্যবেক্ষকদের কাছে ওই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলে বিবেচিত হয়নি।’
বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি বা নির্বিচারে হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাগারের অবস্থা, নির্বিচারে গ্রেফতার বা আটক, রাজনৈতিক বন্দি, কোনো ব্যক্তির অপরাধের জন্য পরিবারের সদস্যদের শাস্তি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, সাংবাদিকদের অযৌক্তিকভাবে গ্রেফতার বা বিচার, মতপ্রকাশ সীমিত করার জন্য ফৌজদারি মানহানি আইন কার্যকর, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং মিডিয়ার ওপর বিধিনিষেধ, ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা; শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
মানবাধিকার প্রতিবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘স্বতন্ত্র ব্যক্তির অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন একটি অধিকতর নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী বিশ্ব গড়ে তুলতে সহায়তা করে। (মানুষের) মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করার মধ্যদিয়ে দেশ হিসেবে আমাদের পরিচিতির মূল দিকটি ফুটে ওঠে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সম্মান, শ্রদ্ধা ও অংশীদারিত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিয়মিতভাবে মানবাধিকারের বিষয়গুলো বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরছে। আমরা এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখব।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৮২০
আপনার মতামত জানানঃ