কেনিয়ার একজন ধর্মপ্রচারক তার অনুসারীদের যিশুর দেখা পেতে মৃত্যু পর্যন্ত অনাহারে থাকতে বলেছেন, এমন একটি খবর জানার পর তদন্তে নামে পুলিশ। এরপর কবর খুঁড়ে একের পর এক মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেনিয়ার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল মালিন্দিতে একটি বিশালাকার কৃষি খামার বা র্যাঞ্চ চালাতেন পল ম্যাকেঞ্জি নামে সেই ধর্মযাজক। তিনিই তার অনুসারীদের নির্দেশ দেন, যিশুর সাক্ষাৎ পেতে হলে অনাহারে থাকতে হবে। ধর্মযাজকের নির্দেশ মেনে অনাহারে থাকা শুরু করেন হতভাগা লোকগুলো। যার পরিণতি হলো মৃত্যু।
সম্প্রতি অনাহারে থেকে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর অনুসন্ধান করতে গিয়ে ওই গণকবরের সন্ধান পায় পুলিশ। কবর থেকে তুলে আনা এসব মরদেহের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশু রয়েছে বলেও জানা গেছে। এর আগে গত সপ্তাহে একই এলাকা থেকে গুড নিউজ ইন্টারন্যাশনাল চার্চ নামে একটি গির্জার ১৫ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০। গতকাল নতুন করে ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কেনিয়ার উপকূলীয় ছোট্ট শহর মালিন্দির অদূরে এ ঘটনা ঘটেছে। কবর খুঁড়ে তুলে আনা এসব মরদেহের মধ্যে নারী ও শিশুদের লাশ আছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই জায়গা থেকে আরও মরদেহ উদ্ধার হতে পারে বলে ধারণা করছে তারা। অনুসন্ধান চলছে।
মালিন্দির অদূরে শাকাহোলা নামের একটি বনে অগভীর এসব কবর পাওয়া গেছে। সেখানে একটি গর্তে একসঙ্গে অনেককে কবর দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে এখান থেকে গুড নিউজ ইন্টারন্যাশনাল চার্চ নামের একটি গির্জার ১৫ সদস্যকে উদ্ধার করা হয়।
কেনিয়ার সংবাদমাধ্যমে কবর খুঁড়ে তুলে মরদেহ আনার এই ঘটনাকে ‘শাকাহোলা বন গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অনাহারে মৃত্যুবরণ করতে অনুসারীদের নির্দেশ দেওয়া ওই ধর্মপ্রচারকের নাম পল ম্যাকেঞ্জি। অনাহারে থেকে মারা গেছেন, চারজনের মরদেহ উদ্ধারের পর ১৫ এপ্রিল তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কেনিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম কেবিসি ধর্মপ্রচারক পল ম্যাকেঞ্জিকে ‘ধর্মীয় নেতা’ বলে বর্ণনা করেছে। ম্যাকেঞ্জি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে আদালত তাঁকে জামিন দেননি। ম্যাকেঞ্জির দাবি, ২০১৯ সালে গির্জাটি বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় রেডক্রস জানিয়েছে, নতুন করে আরও ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে সবমিলিয়ে ৩৪ জনকে। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রেডক্রস আরও জানিয়েছে, সবমিলিয়ে র্যাঞ্চটি থেকে ২১৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত এবং জীবিত উদ্ধার করা হলো মাত্র ১২৪ জনের বেশি।
কেনিয়ার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এসব মানুষের মৃত্যু অনাহারে হয়েছে কি না, তা জানতে তাঁদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা হবে।
এ বিষয়ে কেনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিথুরে কিনদিকি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না সেখানে আরও কত কবর আছে। আরও কত মরদেহ আছে। আমরা ভাগ্যবান যে শেষ পর্যন্ত এসব মরদেহ খুঁজে পেয়েছি। তা না হলে এই ভয়াবহ ঘটনার কথা কেউ জানতে পারত না।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৩১৫
আপনার মতামত জানানঃ