নারীর জন্যে মোটেই ভালো যায়নি ২০২২ সাল। এই যে বলছি ভালো যায়নি বছরটা এর মানে কিন্তু এই না যে, এর আগের বছর খুব ভালো ছিল বা আগামী বছর আমরা প্রত্যাশা করতে পারি যে বাংলাদেশে নারীর অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন হয়ে যাবে।
বছরটা ভালো যায়নি মানে হচ্ছে, ২০২২ সালও সমাজে নারীর অবস্থা আগের মতোই ছিল, কোনো অগ্রগতি হয়নি, ধর্ষণ ও নারীর প্রতি অন্যান্য নির্যাতন এর আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে এবং ২০২২ সালে নারীর অধিকারের প্রশ্নে কিছু নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে যেগুলো নারীর মুক্তির সংগ্রাম প্রভাবিত করবে।
গত বছর দেশে ৯ হাজার ৭৬৪ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৩৬০ জন। ধর্ষণের পর হত্যার করা হয়েছে ৪৫০ জনকে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৭ হাজার ২৭টি।
গত সোমবার (৬ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এই পরিসংখ্যান জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) লাইট হাউজ। সংবাদমাধ্যম ও পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান করা হয়েছে।
লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন আর রশিদ বলেন, ২০২২ সালে মোট ৯ হাজার ৭৬৪ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৩৬০ জন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৫০ জনকে। আর দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৪০ জন।
যৌতুকের কারণে মারধর করা হয়েছে ২ হাজার ৬৭৫ জনকে এবং যৌতুক না পেয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৫৫ জনকে। অপহরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৭০ জনকে। এসব বিষয়ে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১৭ হাজার ২৭টি মামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সাধারণত নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা গুরুতর হলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ৯টি পত্রিকা এবং কিছু অনলাইন সংবাদ মাধ্যেমে প্রকাশিত খবরের তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে গত ১১ মাসে (২০২২ সালে) নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩ হাজার ১৮৪টি খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ ধর্ষণের খবর।
তিনি আরও বলেন, “অনলাইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন ব্যাপক বেড়েছে। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিইউ) অনুসারে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভুয়া আইডি, আইডি হ্যাক, ব্ল্যাকমেলিং, মোবাইল ফোনে হয়রানি, আপত্তিকর কনটেন্ট বা বিষয় ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন ৮ হাজার ৭১৫ জন নারী।”
“পাঁচ বছর আগের তুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাসে গড়ে ৩৫০টি মামলা বেড়েছে। বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, প্রতারণা, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। গত বছরের শুরুর দিকের তুলনায় শেষের দিকে অনলাইনে নির্যাতনের অভিযোগ বেড়েছে ২৫%।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, ৫৪% নারী জীবনে একবার হলেও শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী এ সহিংসতা শুধু নারী ও কন্যার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে না, সামগ্রিকভাবে দেশ-সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সমাজে নারীদের প্রতিনিয়ত শারীরিক মানসিকভাবে অপদস্ত হতে হচ্ছে।”
প্রাচীন আমলের বিভিন্ন সামাজিক প্রথা কুসংস্কার এমনকি লোকলজ্জার ভয় কাটিয়ে নারী এখন পুরুষের পাশাপাশি পথ চলতে শুরু করেছে। কিন্তু এ সময় এসেও পথেঘাটে, বাস-ট্রেন এমনকি বাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলেও নারীরা ব্যাপক হারে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
যৌতুক, বাল্যবিয়ে, বহুবিয়ে, ধর্ষণ, হত্যাসহ নারী সহিংসতার ঘটনা নিত্যদিনের। নারীরা রাজনৈতিক সহিংসতারও শিকার হচ্ছেন।
এসডব্লিউএসএস/১৫১৭
আপনার মতামত জানানঃ