মিশর নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পিরামিডের ছবি। নীলনদের তীরে সুপ্রাচীনকালে গড়ে ওঠা মিশরীয় সভ্যতার অনেকগুলো অনন্য নিদর্শনের মধ্যে নিঃসন্দেহে পিরামিড সবচেয়ে বিস্ময়কর ও রহস্যময়।
প্রায় ৫০০০ বছর ধরে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই পিরামিডকে ঘিরে। এমনকি আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের যুগেও খুঁজে পাওয়া যায়নি পিরামিডের অনেক রহস্যের কূল কিনারা।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার গ্রেট পিরামিডে লুকায়িত নতুন চেম্বার আবিষ্কৃত হয়েছে। মিশরের প্রত্নতাত্ত্বিক জাহি হাওয়াস ও পর্যটন মন্ত্রী আহমেদ ইসা চেম্বার আবিষ্কারের এই ঘোষণা দেন। আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয়েছে স্ক্যানপিরামিডস প্রকল্পের বিজ্ঞানীদের।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) মিশরীয় পুরাকীর্তি কর্তৃপক্ষ ৪ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো খুফু পিরামিডের ভিতরে একটি লুকানো করিডোর আবিষ্কারের তথ্য প্রকাশ করেছে। পূর্বে এটা চেওপসের পিরামিড বা গ্রেট পিরামিড নামে পরিচিত ছিল
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) মিশরীয় পুরাকীর্তি কর্তৃপক্ষ ৪ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো খুফু পিরামিডের ভিতরে একটি লুকানো করিডোর আবিষ্কারের তথ্য প্রকাশ করেছে। পূর্বে এটা চেওপসের পিরামিড বা গ্রেট পিরামিড নামে পরিচিত ছিল।
আন্তর্জাতিক প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল খুফুর পিরামিডের প্রবেশদ্বারের উপরে সিলকরা চেম্বারটি খুঁজে পেতে উচ্চ প্রযুক্তির সরঞ্জাম ব্যবহার করেছেন। এ রকম আরও চেম্বার আবিষ্কারের আশা করছেন তারা। সভ্যতার বিস্ময় মিশরের পিরামিড!
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, নয় মিটার দৈর্ঘ্য ও দুই মিটার প্রশস্ত চেম্বারটি বাইরে থেকে প্রবেশ করা যায় না। ছোট ছিদ্র তৈরি করে ভিতরের ছবি ধারণ করে সেখানে কি আছে তা তারা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেন এই চেম্বার তৈরি করা হয়েছে সেটা সম্পর্কে তারা কোনো ধারণা করতে পারছেন না।
স্ক্যানপিরামিডস প্রকল্পের নেতৃস্থানীয় সদস্য ক্রিস্টোফ গ্রোস জানিয়েছেন, চেম্বারের শেষে রয়েছে দুইটি বড় চুনাপাথর। এখন প্রশ্ন হলো, সেই পাথরগুলোর পিছনে ও চেম্বারের নীচে কী রয়েছে? মিউনিখের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির এই বিশেষজ্ঞ অনেক লুকায়িত তথ্য আরিস্কার করার আশা প্রকাশ করেছেন।
খুফু পিরামিড কায়রোর ঠিক বাইরে অবস্থিত। ফেরাউন, যিনি খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০৯ থেকে ২৪৮৩ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন, তার নামে নামকরণ করা হয় খুফু পিরামিডের।
মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত মৃত নগরী আল গিজা। এখানে দেখা পাওয়া যায় তিনটি বড় বড় পিরামিডের। এগুলো হল যথাক্রমে ফারাও খুফু, তার ছেলে ফারাও খেফ্রে এবং খেফ্রের ছেলে মেনকাউরে এর পিরামিড।
এরা সবাই ছিলেন মিশরের চতুর্থ রাজবংশের রাজা। তবে এই তিনটি তো বটেই মিশরের সবগুলো পিরামিডের মধ্যে ফারাও খুফুর পিরামিডটি হল সবচেয়ে উঁচু এবং আকারে সবচেয়ে বড়। একারণে ফারাও খুফুর পিরামিডটি গিজার গ্রেট পিরামিড নামেও বহুল পরিচিত।
এমনকি খ্রিস্টপূর্ব ষড়বিংশ শতক থেকে, চতুদর্শ শতক পর্যন্ত প্রায় সুদীর্ঘ চার হাজার বছর এটিই ছিল মানব সৃষ্ট সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা। তাই খুব সহজে অনুমেয় প্রযুক্তি ও প্রাচুর্যে প্রাচীনযুগে মিশরীয় সভ্যতা অন্য সভ্যতাগুলোর চেয়ে কত বেশি অগ্রসর ছিল।
গিজার গ্রেট পিরামিডটি তৈরির সময়কাল ২৫৬০ থেকে ২৫৪০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ। প্রকৃত উচ্চতা ৪৮১ ফুট হলেও বর্তমান উচ্চতা ৪৫৫ ফুট। পিরামিডটির ভূমি বর্গাকৃতির এবং দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয় দিকেই ৭৫৬ ফুট।
পাথরের বড় বড় চাঁই দিয়ে বানানো এই স্থাপনাটি আসলে কীভাবে তৈরি করা হয়েছিল সেটা আজও গবেষকদের কাছে এক বিস্ময়ের ব্যাপার। আরও অবাক করা বিষয়টি হল এর নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হয়েছিল ২৩ লক্ষ বড় বড় পাথরের চাঁইয়ের। একেকটি পাথরের চাঁইয়ের ভর ছিল গড়ে কমপক্ষে ২ টন থেকে ১৫ টন।
এমনকি কিছু কিছু চাঁইয়ের ভর ৫০ টনেরও বেশি ছিল। চাঁইগুলোর বেশির ভাগই ছিল লাইম স্টোনের। গুণে মানে অনন্য এই লাইমস্টোনগুলো আনা হত তুরা অঞ্চল থেকে। নীল নদের পূর্ব তীর থেকে জলপথে নিয়ে আসা হত এগুলো।
কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল কালের পরিক্রমায় চুরি হয়ে গেছে অনেকগুলো লাইম স্টোনের চাঁই যার বেশির ভাগই পরবর্তী সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে কায়রো শহরের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানে। গিজার পিরামিডের ভেতরতে রয়েছে তিনটি কক্ষ। একটি বেইসমেন্টে। বাকি দুটি উপরে। উপরের কক্ষ দুটি ছিল যথাক্রমে রাণী ও রাজার সমাধি কক্ষ।
এই কক্ষগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল গ্রানাইটের পাথর দিয়ে। প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূর থেকে নিয়া আসা হয়েছিল সেগুলো। পিরামিডের ভেতরে ঢোকার সরাসরি কোন পথ কোন পথ ছিলনা।
তবে অনেকগুলো চোরাই পথ বানানো হয়েছে যুগে যুগে। এই পথগুলো দিকে ঢুকে গত পাঁচ সহস্রাব্দের বিভিন্ন সময় চুরি করে প্রায় শূন্য করে ফেলা হয়েছিল এক সময়ের ঐশ্বর্যমন্ডিত গিজার গ্রেট পিরামিড। তবে দর্শনার্থীদের জন্য এখন ভেতরে ঢোকার রাস্তা আছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা মিশরের পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিত্রায়িত পিরামিডটিও হল গিজার গ্রেট পিরামিড। তাই গিজার গ্রেট পিরামিডকে পিরামিডের সমার্থক বললেও ভুল হবেনা।
এসডব্লিউএসএস/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ