থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। প্রিন্টারের মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির বিষয়টি ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তার’ ক্ষেত্রে ‘গুরুতর হুমকি’ সৃষ্টি করতে পারে। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল এক বিবৃতিতে এই বিষয়টি জানিয়েছে।
সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল–আরাবিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। ইন্টারপোল জানিয়েছে, থ্রিডি প্রিন্টিং শিল্প যে গতিতে বিকশিত হচ্ছে তা বজায় থাকলে সম্ভবত তা আগ্নেয়াস্ত্রের ‘অত্যাধুনিকতা এবং উৎপাদন’ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে বলে ইন্টারপোল সতর্ক করেছে।
ইন্টারপোলের এক মুখপাত্র আল–আরাবিয়াকে বলেছেন, ‘এরই মধ্যে সামরিক কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা আমরা দেখতে পেয়েছি। মুদ্রণ শিল্পের এই বিবর্তন অস্ত্রগুলোকে আরও বেশি নিখুঁত করে তুলবে এবং উৎপাদনের গতি বৃদ্ধি করে নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করবে।’
বিশেষজ্ঞরা থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এখনো এমন প্রিন্টার ব্যবহার করে ‘অস্ত্র তৈরি নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ’ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো নেই।
এই বিষয়ে ইন্টারপোলের ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘প্রিন্টার, প্রিন্টার তৈরির উপাদান এবং সেসব প্রিন্টারে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর উৎস নিয়ন্ত্রণে আইনি ব্যবস্থা না নিলে আমরা গুরুতর হুমকির সম্মুখীন হব।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি মাত্র থ্রিডি প্রিন্টারে পূর্ণাঙ্গ একটি অস্ত্র তৈরি সম্ভব নয়। একটি নির্দিষ্ট প্রিন্টারে একটি অস্ত্রের একটি নির্দিষ্ট অংশ উচ্চারণ করা যায়। তবে ইন্টারপোলের মতে, অনেক ক্ষেত্রেই থ্রিডি প্রিন্টার থেকে কেবল আগ্নেয়াস্ত্রের মূল কাঠামো বের করা যায়।
থ্রিডি প্রিন্টার
থ্রিডি প্রিন্টিং ধীরে ধীরে এমন এক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যেখানে খালি চোখে আসল আর নকলের মধ্যে তফাত বোঝার জো নেই৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা এক বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকলের মান আরও উন্নত করে তুলেছেন৷
একটি আপেল; দেখলে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সেটি আসলে থ্রিডি কপি৷ নকল বলে চেনার কোনো উপায় নেই৷ এর পেছনে যে প্রিন্টিং প্রযুক্তি রয়েছে, তা অক্টোপাসের কাছ থেকে ধার নেওয়া৷ অক্টোপাস গোত্রের কাটলফিশ ভোল বদলের কাজে ওস্তাদ৷ পরিবেশ অনুযায়ী সে নিজেকে এমনভাবে ক্যামোফ্লাজ করে ফেলে যে, শত্রুরা তাকে চিনতেই পারে না৷ নতুন ধরনের ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সে এক নিখুঁত আদর্শ৷
ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট-এর ড.ফিলিপ উরবান নতুন এই সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সত্যি আমরা কাটলফিশ থেকে প্রেরণা পেয়েছি, কারণ সে কম রং নিয়েও নিখুঁতভাবে পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে মিশে যেতে পারে৷ তার ত্বকে ‘ক্রোম্যাটোফোর’ নামের ক্ষুদ্র রংয়ের ঝুলি রয়েছে৷ তা দিয়ে সে পানির নীচে সব রকম রং মেলে ধরতে পারে৷ এমনকি তার ত্বকের কাঠামো ও বিন্যাসও ফুটে ওঠে৷ একইভাবে আমাদের সফটওয়্যার থ্রিডি প্রিন্টিং করে৷”
থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের একটি অসুবিধা তো শুরুতেই জানলাম। এবার চলুন আরও কিছু সুবিধা-অসুবিধা জেনে নেওয়া যাক।
থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি
অন্যান্য বিভিন্ন শিল্পে প্রয়োগের পরে হাউজিং শিল্পে যখন থ্রিডি প্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা উঠল, সবাই আবিষ্কার করল যে এই প্রযুক্তি থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে আসলে আবাসন শিল্পই। থ্রিডি প্রিন্টেড প্রযুক্তির এমন কিছু আশ্চর্য সুবিধা রয়েছে যা যেন আবাসন শিল্পকে মাথায় রেখেই করা!
তুলনামূলক কম খরচ
থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি নিয়ে চিন্তা করার একদম প্রথম নিয়ামকটি হল এর তুলনামূলক কম খরচের বিষয়টি। এই প্রযুক্তি বাড়ি নির্মাণ খরচ কমায় নানাদিক থেকে। বাড়ি নির্মাণে শ্রমিক মজুরি কমে যায় অনেকাংশেই যেহেতু প্রিন্টার নিজেই কাজ এগিয়ে দেয় অনেকটুকু। থ্রিডি প্রিন্টিং এর মাধ্যমে এখন এমন কম খরচে বাড়ি বানানোর কথা ভাবা হচ্ছে যা প্রথাগত উপায়ে বানানোর কথা কল্পনাও করা যায় না। বলাই বাহুল্য যে এমন কম মূল্যে বাসস্থান নির্মাণের সম্ভাবনা স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য হয়ে উঠতে পারে আশীর্বাদস্বরূপ।
সময় কম লাগে
থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি তৈরীর সময় ডিজিটাল ডিজাইন থেকেই সরাসরি তা প্রিন্ট হয়ে যায়। এজন্য কন্সট্রাকশন প্রসেস হয় অনেক দ্রুত এবং নির্ভুল। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি দিয়ে একদিনের মধ্যেই একটি স্ট্রাকচার দাঁড় করিয়ে ফেলা যায় যা প্রথাগত উপায়ে লাগত কয়েকমাস। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আমেরিকার টেক্সাসে থাকা একটি কন্সট্রাকশন স্টার্ট-আপ, আইকন, এমন প্রযুক্তি ডেভেলপ করেছে যাতে ৬৫০ বর্গফুটের একতলা একটি থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি প্রিন্ট করা যাবে মাত্র ২৪ ঘন্টায়। রাশিয়া, চায়নার মত দেশেও শুরু হয়েছে থ্রিডি প্রিন্টেন্ড প্রযুক্তির ব্যবহার।
অজস্র ডিজাইনের সম্ভাবনা
শুধু যে দাম কম আর সময় সাশ্রয়ী তাই না, থ্রিডি প্রিন্টিং হাজির হয়েছে আরেকটি বড় সম্ভাবনা নিয়ে। পুরাতন পদ্ধতিতে যখন সমস্ত নির্মাণকাজ করতে হত হাতে, তখন ডিজাইনে কিছু সীমাবদ্ধতা থেকেই যেত। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দূর করেছে সেই সীমাবদ্ধতাকে। নিত্যনতুন, সৃষ্টিশীল যে সব নকশা এখন তৈরি করছেন স্থপতিরা, থ্রি ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিই সেগুলো করতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে।
বাড়ির ভুল ডিজাইন
অনেক সুবিধাজনক দিক থাকার পরেও আবাসন শিল্পে থ্রি ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি এখনো নতুন। থ্রি ডি প্রিন্টেড বাড়ি তৈরি করতে গেলে এখনো মুখোমুখি হতে হয় নানান প্রতিবন্ধকতার। তারই কয়েকটি হল
নেই কাচামালের সহজলভ্যতা
থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি আবাসন শিল্পে আসার পরপরই যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে তা হল উপযুক্ত নির্মাণ সামগ্রীর অভাব। প্রথাগত বাড়ি তৈরির কাচামাল আর থ্রিডি প্রিন্টারের কাচামাল কখনই এক হবে না। আর বর্তমানে থ্রিডি প্রিন্টারে যেসব কাচামাল ব্যবহার করা যায় তার সংখ্যা খুবই সীমিত। তাছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রতিটি প্রিন্টারের জন্য থাকে নির্দিষ্ট ম্যাটেরিয়াল, অর্থ্যাৎ এক প্রিন্টারের কাচামাল অন্য প্রিন্টারে ব্যবহার করে থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব হয় না।
জনশক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব
ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে মানুষের অনেক কাজ ইতোমধ্যেই নানান স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের দখলে চলে গিয়েছে। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি যদি জোরেশোরে শুরু হয়ে যায়, নিশ্চিতভাবেই তার প্রভাব পড়বে বর্তমানের জনশক্তি ও আবাসন শিল্পে সাথে জড়িত মানুষের উপর। বর্তমানে প্রথাগত নির্মাণে যে দক্ষতা প্রয়োজন তার দাম কমে যাবে, হুমকির মুখে পড়বে নির্মাণ শ্রমিকেরা। যারা কন্সট্রাকশনের জন্য বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা করেন তারাও পড়বেন বিপদে। আমাদের বৈদেশিক রেমিটেন্সের এক বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, যেখানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করেন আমাদের শ্রমিকেরা। নির্মাণ কাজ করতে তাদের তেমন স্পেশালাইজড কোন দক্ষতা প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু, থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ির জন্য দরকার পরবে নির্দিষ্ট দক্ষতার যা আমাদের সাধারণ শ্রমিকদের নেই। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আমাদের রেমিটেন্সের উপরেও।
এসডব্লিউএসএস/১৪০৫
আপনার মতামত জানানঃ