চাঁদের মাটিতে মানুষ পা দিয়েছে বটে, কিন্তু এখনও স্বপ্ন ও বাস্তবের মাঝমাঝি অবস্থান করে আশ্চর্য উপগ্রহটি। শুধু কাব্য আর গল্পগাঁথায় নয়, তাকে নিয়ে বাস্তবেই রয়েছে হাজারও রহস্য। তেমনই এক রহস্য চাঁদের জন্ম সংক্রান্ত।
এবার চাঁদের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় দাবি করা হল, পৃথিবীর এই উপগ্রহটি তৈরি হতে শতাব্দীর পর শতাব্দী সময় লাগেনি। বরং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল চাঁদের। প্রায় তৎক্ষণাৎ ঘুরতে শুরু করে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে।
সাধারণ ধারণা হল চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে। পৃথিবীতে বড়সড় কোনও আলোড়নের ফলে পৃথিবীরই উপাদান ছিটকে বেরিয়ে চাঁদের সৃষ্টি হয়ে বলে মনে করা হয়। তবে পৃথিবীর সঙ্গে চাঁদের গঠনের আশ্চর্য মিল নিয়ে ধন্দ রয়েছে বিজ্ঞানীদের।
চাঁদের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আগেও বহু গবেষণা হয়েছে। কিন্তু ঠিক কী ভাবে এই উপগ্রহ তৈরি হয়েছে, তার খুঁটিনাটি তথ্য ঠিক সেভাবে পরিষ্কার হয়নি বিজ্ঞানীদের কাছে। তা বহুলাংশেই রহস্যে মোড়া থেকে গিয়েছে। সাম্প্রতিক এই গবেষণায় চাঁদের উৎস সম্পর্কে নতুন তথ্য জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ব্রিটেনের ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটির অধীন ইনস্টিটিউট ফর কম্পিউটেশনাল কসমোলজির এক দল গবেষক জানিয়েছেন, চাঁদ সৃষ্টি হতে সময় লেগেছিল কয়েক ঘণ্টা মাত্র। মঙ্গল গ্রহের আকারের থিয়া নামের এক মহাজাগতিক বস্তুর আঘাতে চাঁদের সৃষ্টি হয়।
চাঁদের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে এই গবেষণা পৃথিবীর পক্ষেও কার্যকরী হবে। কীভাবে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হল, তা বুঝতেও বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে চাঁদ সংক্রান্ত এই গবেষণা।
ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটির গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ। কৃত্রিমভাবে মডেলের ব্যবহারে থিয়া ও পৃথিবীর সংঘর্ষের পুনর্নিমাণ করেও দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের দাবি, তীব্র সংঘর্ষে থিয়া ও পৃথিবী থেকে কিছুটা করে অংশ ছিটকে বেরিয়ে এসেছিল। সেই অংশ বা পদার্থই প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে শুরু করে।
নাসার দাবি, চাঁদের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে এই গবেষণা পৃথিবীর পক্ষেও কার্যকরী হবে। কীভাবে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হল, তা বুঝতেও বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে চাঁদ সংক্রান্ত এই গবেষণা।
বর্তমান গবেষণার নেতৃত্বে থাকা জ্যাকব কেগেরেস নাসাকে এই বিষয়ে বলেছেন, “এটি চাঁদের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় একটি সম্পূর্ণ নতুন পরিসর খুলে দিয়েছে।” ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটির গবেষণা চাঁদ ও পৃথিবীর সৃষ্টি ও মানুষের পৃথিবীতে আবির্ভাব সংক্রান্ত রহস্যে আলো দেখাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক স্যাটেলাইট। সূর্যের আলো যখন চাঁদে ওপরে পড়ে তখন এটাকে আমরা দেখতে পাই। সৌরজগতে যত প্রাকৃতিক স্যাটেলাইট আছে, আকারের দিক থেকে চাঁদ তাদের মধ্যে পঞ্চম।
পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০৩ কিলোমিটার। ২৭.৩ দিনে চাঁদ পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসে।
পৃথিবীর মতো চাঁদেও পাহাড়-পর্বত আছে। চাঁদের সবচেয়ে উঁচু পর্বতের নাম মনস হিউজেনস। এটা ৪.৭ কিলোমিটার উঁচু।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো মিশনের মাধ্যমে চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছিল। চাঁদে বাতাস একেবারেই নেই। তবে পানির উপস্থিতি আছে।
দিনের বেলা চাঁদ খুব গরম থাকে। রাতে হয়ে যায় খুব শীতল। চাঁদ এবং সূর্যের মাঝখানে যখন পৃথিবী চলে আসে তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে। এটাকে আমরা চন্দ্রগ্রহণ বলি।
মহাকাশ নিয়ে মানুষ গবেষণা করে সামান্য কিছুই জানতে পেরেছে। গবেষকরা চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহে প্রাণী বসবাসের উপযোগী পরিবেশ আছে কিনা বা পরিবেশ তৈরি করা যায় কিনা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে।
চাঁদের বুকে কোনো উদ্ভিদ নেই। এখন পর্যন্ত মানুষ চাঁদের বুকে উদ্ভিদের অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে পারেনি।
খুঁজে পায়নি তাতে কি, তাই বলে কি চাঁদে উদ্ভিদ থাকবে না? এমন অবাস্তব ধারণার বাস্তব রূপ দিতে অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা নতুন এক অভিযানের অংশ হিসেবে ২০২৫ সাল নাগাদ চাঁদে গাছ লাগানোর চেষ্টা করছেন।
এএফপির খবরে বলা হয়, ০৭ অক্টোবর এ–সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে মানুষের বসতি স্থাপনের উপায় বের করতে এ গবেষণা সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫০
আপনার মতামত জানানঃ