[zoomsounds_player artistname=”স্টেটওয়াচ পডকাস্ট” songname=”খবরটি শুনুন” type=”detect” dzsap_meta_source_attachment_id=”32730″ source=”https://statewatch.net/wp-content/uploads/2022/09/ধর্মকে-পুঁজি-করে.mp3″ thumb=”https://statewatch.net/wp-content/uploads/2022/07/পডকাস্ট.jpg” config=”default” autoplay=”off” loop=”off” open_in_ultibox=”off” enable_likes=”off” enable_views=”off” enable_rates=”off” play_in_footer_player=”default” enable_download_button=”off” download_custom_link_enable=”off”]
বাংলাদেশে এতদিন প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং করছিল এমন একটি ব্যাংক তার নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ধারার ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে।
নতুন বছরের শুরু থেকে পূর্ণাঙ্গ শরীয়াহভিত্তিক ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে এনআরবি গ্লোবাল নামের এই ব্যাংকটি। তাদের নতুন নাম হয়েছে ‘গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।’
সম্প্রতি এরকম দু’টি ব্যাংক ইসলামী ধারার ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করায় বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে ১০-এ উঠেছে।
ইসলামী ব্যাংকিং এর আগে ছিল ৮টি ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক (বাংলাদেশ), ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। নতুন দুটি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড ও গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেডসহ ১০টি ব্যাংক।
ইসলামে সুদকে হারাম করা হয়েছে। যে কারণে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সুদি ব্যাংক থেকে সরে ইসলামি ব্যাংকগুলোকে বেছে নিচ্ছে বেশি। তবে সাধারণ অনেককে বলতে শোনা যায়, বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের নামে যা হচ্ছে, তা একটা কৌশলমাত্র। এগুলোর কার্যক্রম প্রচলিত ব্যাংকের চেয়ে খুব একটা ভিন্ন নয়। দেখা যায়, প্রচলিত ব্যাংকগুলো যে প্রকল্পে অর্থায়ন করছে, একই প্রকল্পে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগ করছে। এতে এতদিন যে প্রশ্নটা জোরালো হয়ে দেখা দিত— ইসলামি ব্যাংকগুলো কি তবে ঘুরিয়ে সুদ খায়? এখন আর সে প্রশ্ন বা সন্দেহ নেই। দেশের ইসলামি ব্যাংকগুলো সুদমুক্ত ব্যাংকিং কার্যক্রমের বিজ্ঞাপন দিয়ে আসলে তারা সরকার নির্ধারিত সুদ সুবিধার পথেই হাঁটছে।
অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের উদ্যোক্তাদের ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্পের অধীনে সিএমএসএমই খাতে ঋণ দিতে সম্প্রতি এই চুক্তি সই হয় বলে ব্যাংকটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
`সিএমএসএমই খাতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ প্রকল্পের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংক হিসেবে কাজ করার জন্য এই চুক্তি করেছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই স্কিম পরিচালনার জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জাকের হোসেন এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ হাবিব হাসনাত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্পের শর্তানুযায়ী ইসলামী ব্যাংক সিএমএসএমই, বিশেষ করে এসএমই ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা ও নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে ঋণ প্রদান করবে। এ ঋণের সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২ শতাংশ সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৭ শতাংশ সুদে গ্রাহকদের দেবে।
পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্পের শর্তানুযায়ী ইসলামী ব্যাংক সিএমএসএমই, বিশেষ করে এসএমই ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা ও নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে ঋণ প্রদান করবে। এ ঋণের সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।
অথচ ইসলামি ব্যাংকিং নিয়মানুযায়ী, ইসলামি ব্যাংক অর্থের ব্যবসা করে না, বরং পণ্যের ব্যবসা করে। ইসলামি ব্যাংকে নগদ অর্থ পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয় না, বরং নগদ অর্থকে পণ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সুদি ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে সুদি অর্থের ব্যবসা করে অর্থাৎ অর্থকে ব্যবসার পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে।
ইসলামি ব্যাংক সব ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনাবলি মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এতদুদ্দেশ্যে ইসলামি ব্যাংকে তদারককারী শরিয়া বোর্ড থাকে। পক্ষান্তরে সুদি ব্যাংকের অস্তিত্ব যেহেতু সুদের ওপর নির্ভরশীল, সুতরাং সেখানে কোনো শরিয়া বোর্ড নেই।
ইসলামি ব্যাংক আসলের অতিরিক্ত কোনো অর্থ পাওয়ার উদ্দেশ্যে কাউকে কোনো নগদ অর্থ ঋণ হিসেবে প্রদান করে না। কারণ ঋণের ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে শুধু আসল ফেরত নেবে, চুক্তির ভিত্তিতে আসলের অতিরিক্ত কিছু নিলে সুদ হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসলামি ব্যাংক প্রফিট-লস শেয়ারিং বা মুশারাকা পদ্ধতি বলে যে ব্যাংকিংয়ের কথা বলে, বাস্তবে তেমনটি দেখা যায় না। ইসলামি ব্যাংক কখনও লসের ভাগ নিয়েছে বলে এখন পর্যন্ত শুনিনি।
এটা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বিশ্বের কোনও ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেমেই প্রফিট-লস শেয়ারিং দেখা যায় না। ইসলামি ব্যাংক যেভাবেই চলুক না কেন, মানুষ মনে করে ইসলামসম্মত ব্যাংকিং করে। সুদমুক্ত থাকার জন্য সেখানে তারা টাকা রেখে আসে। এই ব্যাংকের ডিপোজিট কালেকশনের জন্য কোনও মার্কেটিংও করতে হয় না। ইসলামি ব্যাংকগুলো মূলত এতদিন রেট ফিক্সড না করে বলতে চাইত, তারা সুদমুক্ত। এখন সে দেয়ালও ভেঙ্গে গেছে। এখন ঘোষণা দিয়েই ‘ইসলামি ব্যাংকিং’এর বিজ্ঞাপন দিয়ে সুদের ব্যবসা করছে। আর নিয়মবহির্ভূত এ কাজে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা গোটা ব্যাংকিং সিস্টেমকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। অবশ্য দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম নিয়ে বাজারে তেমন কোনো প্রশংসাসূচক কথা প্রচলিত নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্মের নামে সহজ সরল মানুষদের ঠকানো এ নতুন নয়। এক শ্রেণির ধর্মীয় লেবাসধারী সহজ সরল মানুষদের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে নিজেদের আখের গোছান। এতে না আছে ধর্মের প্রতি তাদের কোনো অনুরাগ না আছে অসহায় মানুষদের প্রতি মমত্ববোধ। সহজ সরল মানুষেরা ধর্মের নামে দুর্বল বলে তাদের সেই অবস্থানটাকে ব্যবসা হিসাবে ব্যবহার করছে ধর্মীয় লেবাসধারী প্রতারকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের জনগণকে যদি শতভাগ শিক্ষিত করা যেতো, তবে এমন প্রতারণা কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। আক্ষরিক জ্ঞান না থাকা বেশিরভাগ মানুষ শোনা কথায় বিশ্বাসী হয়ে ফাঁদে পা দেন। এ থেকে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম দেশকে শতভাগ শিক্ষিত তৈরী করা এবং প্রতারকদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৮
আপনার মতামত জানানঃ