প্রতিমাসেই মাসোহারা হিসাবে দুই হাজার টাকা করে চাঁদা নেন পুলিশ। মাসিক চাঁদা দিতে বিলম্ব হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি রেস্তোরাঁর দুই কর্মচারীকে মারধর করেন পুলিশের এএসআই বারেক । গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার গোলাকান্দাইল মহাসড়কের পাশে সুগন্ধা রেস্তোরাঁয় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে রেস্তোরাঁর দুই কর্মচারীকে মারধরের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাতে অভিযুক্ত ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই বারেককে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি খাবার হোটেলে প্রবেশ করেন পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি। এ সময় তিনি বসে থাকা এক যুবককে চড়-থাপ্পর মারতে শুরু করেন। মারধর করে তাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে যান। একইভাবে আরেকটি ভিডিওতে আরেক যুবককে মারধর করতে দেখা যায়।
অভিযোগ উঠেছে সুগন্ধা রেস্তোরাঁর কর্মচারী সাগর ও নাঈমকে মারধর করা হয়। তারা জানান, প্রতিমাসে ভুলতা ফাঁড়ির পুলিশ দুই হাজার করে টাকা নেয়, মাসোহারা হিসেবে এ টাকা দিতে হয়। ঈদের ছুটিসহ নানা কারণে টাকা দিতে বিলম্ব হয়। তাই পুলিশ কর্মকর্তা বারেক ওইদিন এসে তাদের মারধর করেছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযুক্ত পুলিশের এএসআইকে ভুলতা ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি, অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিমাসে ভুলতা ফাঁড়ির পুলিশ দুই হাজার করে টাকা নেয়, মাসোহারা হিসেবে এ টাকা দিতে হয়। ঈদের ছুটিসহ নানা কারণে টাকা দিতে বিলম্ব হয়। তাই পুলিশ কর্মকর্তা বারেক ওইদিন এসে তাদের মারধর করেছে।
সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হয়, কারো ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা হয়। শাস্তির মাধ্যমে যদিও তাদের বোঝানো হয়, অপরাধ করলে পার পাওয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো- পুলিশে অপরাধ কমছে না, বাড়ছে প্রতিদিন।
অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ‘পুলিশে জবাবদিহিতার অভাবেই এ পরিস্থিতি। এটি কমাতে হলে দায়িত্বশীল অফিসারদেরও জবাবদিহিতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অন্যায় অনৈতিক কাজের কারণেই সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু পুলিশ সদস্য মিলে আইনের অপব্যবহার করে ডাকাতি করার নিমিত্তেই এই চক্রটি গড়ে তোলেন। একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চেয়ে কম নয় এই চক্রটি। আইনকে ব্যবহার করে তাদের চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্ম একদিকে যেমন পুলিশের জন্য লজ্জার অপরদিকে দেশের জন্যও। সাম্প্রতিককালে পুলিশের এহেন অপকর্মের অভিযোগ সন্ত্রাসীদের চেয়েও বেশি পরিমাণে আসছে। পুলিশের কাছে অনেকটাই জিম্মি হয়ে আছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, কর্মজীবীরা। কিছু হলেই সন্ত্রাসীদের চেয়ে ভয়ানক পদ্ধতিতে নির্যাতন করা হয়। যখন তখন ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে লুটে যাচ্ছে প্রচুর টাকা। এসব বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০২
আপনার মতামত জানানঃ