ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যেই ইসলাম শাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে জোরালো তৎপর হয়ে উঠেছে কট্টর ইসলামী সংগঠনগুলো। এমনই দাবি করেছে পাটনা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দুই আতঙ্কবাদী।
জানা যাচ্ছে, ইসলাম সংগঠনগুলির পরিকল্পনা হলো ২০৪৭ সালের মধ্যেই ভারতকে ইসলাম শাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করা। তাদের এই মন্তব্যের পর রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা ভারতজুড়ে।
ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি দেশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য পাটনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দুই আতঙ্কবাদীকে। তাদের মধ্যে একজন মহম্মদ জালাল উদ্দিন ঝাড়খণ্ড পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে কিভাবে দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত হতে পারে সেই বিষয় নিয়ে কপাল কুঁচকেছে প্রশাসনেরও। অপর অভিযুক্তের নাম আতাহার পারভেজ। সে আবার পিএফআই-এর সদস্য।
পাটনা পুলিশ সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, দুই অভিযুক্ত মার্শাল আর্ট শেখবার নাম করে জঙ্গিদের প্রশিক্ষন দিত। এই দুই আতঙ্কবাদীকে তল্লাশি করে পিএফআই-এসডিপিআই-র বেশ কিছু গোপন কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেই কাগজ থেকেই পুলিশ জানতে পেরেছে ২০৪৭ সালের মধ্যেই ইসলাম শাসিত রাষ্ট্র হবে ভারত।
পুলিশ সূত্র মারফত আরও জানা যাচ্ছে, দুই অভিযুক্তের থেকে প্রশিক্ষন নিতে ভিন রাজ্য থেকেও আসত অনেকে। বিগত দু’মাস ধরেই ভিন রাজ্যকে প্রশিক্ষন নিতে আসার সংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে গিয়েছিল। অন্য রাজ্য থেকে যারা আসত তারা টিকিট বুকিং এবং হোটেলে ঘর ভাড়া নেওয়ার সময় নিজেদের নাম বদলে নিত বলে জানা যাচ্ছে।
বিহার পুলিশ একটি ৮ পৃষ্ঠার পিএফআই নথির চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছে যেখানে ভারতের “কাপুরুষ হিন্দুদের” শিক্ষা দেবার কথা বলা আছে। ৮-পৃষ্ঠার এই পিএফআই নথিটি সামনের বছরের জন্য এর লক্ষ্যগুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
‘ইন্ডিয়া ভিশন ২০৪৭’ নামের যে নথিটি, পি এফ আই তার ক্যাডারদের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে, তার বিষয়বস্তু হল যে তারা যেন ‘কাপুরুষ হিন্দুদের’ উপর সম্পূর্ণরূপে আধিপত্য করার এবং তাদের বশীভূত করার লক্ষ্য রাখে এবং এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে যদি মাত্র ১০% মুসলিমও পিএফআই এর সঙ্গে যোগ দেয়।
তারা আরও উল্লেখ করেছে যে তারা তাদের প্রশিক্ষিত ক্যাডারের সহায়তায় এবং তুরস্কের মতো ইসলামিক দেশগুলির সহায়তায় ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ সশস্ত্র বিদ্রোহ করার পরিকল্পনা করছে। তারা ভারতবর্ষ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ‘নতিস্বীকার’ করাতে সাহায্যের জন্য অন্যান্য ইসলামিক দেশগুলির কাছেও আবেদন করেছে।
পুলিশ এর সাথে যোগ করেছে যে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া প্রাক্তন সিমি গোষ্ঠীর সন্ত্রাসবাদী পারভেজ এবং প্রাক্তন পুলিশ অফিসার জালাল উদ্দিন এই সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে।
পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (PFI)-এর এই “ভিশন ডকুমেন্ট” এর প্রথম উপশিরোনাম হল ভারতের মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা। এই বিভাগে, নথিটি নিপীড়িত মুসলমানদের নিজের জবানীতে তাদের কষ্টের তথাকথিত গাল-গল্প ফেঁদেছে, যা ইসলামপন্থীরা বছরের পর বছর ধরে শুনিয়ে সহ-ধর্মাবলম্বীদের হাতে অস্ত্র তুলে নিতে অনুপ্রাণিত করতে ব্যবহার করেছে।
তারা তাদের প্রশিক্ষিত ক্যাডারের সহায়তায় এবং তুরস্কের মতো ইসলামিক দেশগুলির সহায়তায় ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ সশস্ত্র বিদ্রোহ করার পরিকল্পনা করছে। তারা ভারতবর্ষ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ‘নতিস্বীকার’ করাতে সাহায্যের জন্য অন্যান্য ইসলামিক দেশগুলির কাছেও আবেদন করেছে।
পিএফআই দুঃখ প্রকাশ করেছে যে ভারতের একদা শাসক সম্প্রদায় – মুসলমানরা – এখন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে উঠেছে। এতে বলা হয়েছে যে দেশের ৯টি এমন জেলা রয়েছে যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ৭৫% এর উপরে।
পিএফআই বলছে যে মুসলমানদের বর্তমান দুরাবস্থা ব্রিটিশদের সময় থেকে শুরু হয়েছিল, যারা হাস্যকরভাবে এটাও দাবি করে, ব্রিটিশরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করেছিল এবং হিন্দুদের “অনুগ্রহ” করেছিল।
নথিটি বলেছে, “সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদির ক্ষেত্রে মুসলমানরা আগে যে সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করেছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল, সরকারি চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল এবং বাণিজ্য সুবিধা সীমিত করা হয়েছিল। স্বাধীনতার সূচনা থেকেই, উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা অধ্যুষিত ভারত সরকার মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। ”
নথিতে বলা হয়েছে যে মুসলিম বাচ্চাদের তুলনা দলিত বাচ্চাদের সাথে করা হয় এবং “সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থাকে আরও খারাপ করেছে। মুসলমানদের প্রতি রাজনৈতিক বঞ্চনা এতটাই নিচে নেমে এসেছে যে ভারত সরকার শরিয়ত সংক্রান্ত বিষয়েও মুসলমানদের সাথে পরামর্শ করা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ করে না।”
নথিতে বলা আছে, পিএফআই বলছে যে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ২০৪৭ সালের তারিখটি দিয়েছে, যেই সময়ে তারা ভারতে একটি ইসলামী সরকার আছে তা নিশ্চিত করতে পারবে।
নথিতে বলা আছে, আমরা সেই ২০৪৭ সালের স্বপ্ন দেখি যেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে আবার ফিরে এসেছে যা তাদের কাছ থেকে ব্রিটিশ রাজ অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়েছিল।
নথিতে বলা হয়েছে, এই রাষ্ট্রের সাথে পূর্ণ ক্ষমতা প্রদর্শনের সময়, আমাদের প্রশিক্ষিত পিই ক্যাডারদের উপর নির্ভর করা ছাড়াও, আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ইসলামিক দেশগুলির সাহায্যের প্রয়োজন হবে। গত কয়েক বছরে, পিএফআই তুরস্কের মতো একটি ইসলামের পতাকাবাহী দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, কিছু অন্যান্য ইসলামিক দেশের সাথে নির্ভরযোগ্য বন্ধুত্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে”।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৩
আপনার মতামত জানানঃ