সিনহা হত্যাকান্ডের চার্জশিটে ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে ‘টেকনাফ থানায় বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা হয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নিয়ে প্রায় একই শিরোনামে বেশ কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর পুলিশ বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের উপর দেশের মানুষের আস্থা কতটুকু আছে র্যাবের দায়ের করা সিনহা হত্যাকান্ডের চার্জশিট দেখলেই তা অনুমান করা যায়। পুলিশ বিভাগকে সরকারের পক্ষ থেকে কড়াভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইনবর্হিভূত কর্মকান্ড থেকে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। গত কয়েকদিনের পুলিশ প্রধানের বক্তব্যগুলো বিশ্লেষণ করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। কিন্তু পুলিশ নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের অভিযোগ ও সন্দেহের সুরাহা না করে সরকার পুলিশকে আরও আধুনিকায়ন করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। পুলিশের ক্ষিপ্রতা বাড়াতে সরকার পুলিশের জন্য নিয়ে এসেছে টেকনিক্যাল বেল্ট।
“যারা পুলিশে এসে দুর্নীতি করতে চান তারা চাকরি ছেড়ে দেন। অন্য কে কোথায় কী করলো−বাংলাদেশের মানুষ সেগুলো বদার করে না। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর কেউ দুর্নীতি করবে−এটা বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করে না। দুর্নীতির জন্য পুলিশ বাহিনী না। যারা ভবিষ্যতে পুলিশে আসবেন বলে ভাবছেন, তাদের মনে যদি কোনও খারাপ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে পুলিশে আসবেন না, অন্য জায়গায় যান।” – এমনটাই বলছিলেন মঙ্গলবার বাংলাদেশ পুলিশের সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার ‘টেকটিক্যাল বেল্ট’ সংযোজন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহার নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। পুলিশে দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি এবং এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হবো।’ ‘এখন থানায় বসে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে’ উল্লেখ করে সাংবাদিকরা পুলিশ প্রধানকে প্রশ্ন করেন, – তাহলে কি দেশের মানুষের জন্য থানা এখন নিরাপদ নয়? জবাবে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘থানা কোনও হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা কেন্দ্র হতে পারে না। থানা হচ্ছে মানুষের শান্তি ও জীবন রক্ষা করার জায়গা’। তিনি থানা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে স্বীকার করে বলেন, আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’
এদিন সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার ‘টেকটিক্যাল বেল্ট’ উদ্বোধন করেন আইজিপি। টেকটিক্যাল বেল্টের মূল স্লোগান হলো ‘হ্যান্ডস ফ্রি পুলিশিং’, মানে হাত খালি রাখা। এতে পুলিশের কাজে গতি আসবে, মনোবলও বাড়বে এবং একই সঙ্গে পুলিশকে দেখতে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী লাগবে, বলছিলেন পুলিশ প্রধান।
ছয় চেম্বারের আধুনিক এই টেকটিক্যাল বেল্টেই থাকবে পিস্তল, হ্যান্ডকাফ, অতিরিক্ত ম্যাগাজিন, এক্সপেন্ডেবেল ব্যাটন, পানির পট, টর্চলাইট ও ওয়্যারলেস। এতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের হাত থাকবে সম্পূর্ণ খালি।
উন্নত বিশ্বে রুটিন ডিউটিতে পুলিশ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে না। এখন থেকে বাংলাদেশের পুলিশও এটি প্রচলন করতে যাচ্ছে। প্রথমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুলিশ টেকটিক্যাল বেল্ট ব্যবহার করবে। এরপর ধাপে ধাপে দেশের অন্য জেলা ও মেট্রোপলিটন শহরে এটির প্রচলন করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে ডিএমপি ও সিএমপি তাদের সদস্যদের নতুন ধারার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে জানানো হয়। এর ফলে পুলিশ সদস্যরা কোনও ধরনের অস্বস্তি ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে পারবে বলে মনে করছেন পুলিশ প্রধান। এখন থেকে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের এক হাতে ওয়্যারলেস ধরে থাকতে হবেনা সবসময়। নতুন গিয়ার সংযোজনের ফলে ওয়্যারলেস চলে যাবে বেল্টে। কাঁধে সংযোজিত মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যরা ওয়্যারলেস ব্যবহার করতে পারবেন উন্নত বিশ্বের পুলিশের মত।
একজন পুলিশ সদস্যের দায়িত্ব পালনকালে যেসব সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়, তার সবই থাকবে এই অপারেশন গিয়ারের সাথে। টেকটিক্যাল বেল্টের সঙ্গে থাই হোলস্টার যুক্ত করে সেখানে স্মল আর্মস রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বেল্টের সঙ্গে এক্সপ্যান্ডেবল ব্যাটন, টর্চলাইট, হ্যান্ডকাফ ও পানির বোতল রাখার সুযোগ রয়েছে। জরুরি মুহূর্তে দ্রুত মেসেজ আদান-প্রদান নিশ্চিত করতে ওয়্যারলেস সেটের সঙ্গে একটি মাইক্রোফোন জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যরা সেট মুখের কাছে না এনেই মেসেজ আদান-প্রদান করতে পারবেন।
নতুন এই অপারেশন গিয়ার চালু করায় পুলিশ সদস্যদের আগের মতো কাঁধে বা হাতে করে অস্ত্র বহন করতে হবে না। হাত ফাঁকা থাকায় জনগণের যেকোনও প্রয়োজনে দুই হাত ব্যবহার করেই সহযোগিতার জন্য এগিয়ে যেতে পারবেন পুলিশ সদস্যরা।
বিশেষজ্ঞমহলের অভিমত, পুলিশকে আধুনিকায়ন করার আগে জনবান্ধব পুলিশ হিসাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। পুলিশবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে নৈতিকতাবোধের অভাব আছে বিধায় প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে নৈতিকতার শিক্ষাগ্রহন করা উচিত। নৈতিকতাবোধহীন পুলিশকে আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে প্রকৃত আধুনিক করা যায় না।
এসডব্লিউ/নসদ/১০১৮
আপনার মতামত জানানঃ