সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের মতপ্রকাশের কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুল আলম বাবুর সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সোমবার(০৬ জুন) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জগলুল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
এদিন জামিনে থাকা আসামি বাবু আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতিতে বিচারক রায় ঘোষণা করেন। রায় শেষে আদালত সাজা পরোয়ানা জারি করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনৈতিক বিভাগের ৩৮তম ব্যাচের ছাত্র আল আমিন সেতু বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইয়ের উপর একটি কলাম পত্রিকায় প্রকাশ করে। ঐ লেখাটি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৩৮তম ব্যাচের ছাত্র মোরশেদুর আকন্দ ফেসবুকে পোস্ট করেন। ঐ পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় শামসুল আলম বাবু তার ‘মো: কবির মামু’ নামক ফেসবুক আইডি থেকে একটি মন্তব্য করেন। শামসুল আলম বাবু তার মন্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। আল আমিন সেতু লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে শামসুল আলম বাবুকে আটক করা হয়।
অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. ইয়াকুব আলী মিয়া আসামী শামসুল আলম বাবু আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করে এজাহার দাখিল করেন।
তিনি তার এজাহারের সঙ্গে শামসুল আলম বাবুর ফেসবুক আইডি থেকে প্রদত্ত বক্তব্যের হার্ড কপি এবং আল আমিন সেতু কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিলকৃত অভিযোগের কপি সংযুক্ত করেন। এ নিয়ে আশুলিয়া থানায় ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট আসামি শামসুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
এ মামলার তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল শামসুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১৬ সালের ২১ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আসামির অব্যাহতির আবেদন করে করে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। বিচার চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে নয় জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মতামত প্রকাশের অধিকার গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ এটি জনগণকে তথ্য ও ধারণার অবাধ প্রবাহের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে সক্ষম করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যক্তিগত বিকাশের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এটি আমাদের মতবিরোধ এবং শোনার অধিকার দেয়। বিভিন্ন চিন্তাভাবনা এবং মতামত প্রকাশের দ্বারা আমরা আমাদের মৌলিক বিশ্বাস সম্পর্কে নিজস্ব পছন্দ পোষণ করতে পারি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইসিটি আইনের নামে কালো আইনের মাধ্যমে সরকার তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। কেউ যেন এই সরকারের নানা দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে, সেই জন্যই এই সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরি করে মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে চায়।
তারা বলেন, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা— এটা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। যে অধিকার আইন করেও খর্ব করা যায় না। দুর্ভাগ্যবশত আজকে স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী উদযাপন করার পরও আমরা এই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি।
তারা বলেন, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার যেখানে স্বীকৃত, সেখানে তার অপব্যবহার হতেও পারে। তবু সেই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের কথা স্মরণ করতে পারি: ‘জনগণের ইচ্ছাই যেকোনো সরকারের একমাত্র বৈধ ভিত্তি; আর আমাদের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২১
আপনার মতামত জানানঃ