রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কি ক্যান্সারে আক্রান্ত? একটি অনলাইন সংবাদসংস্থা অন্তত তেমনই দাবি করেছে। তারা এমনও জানিয়েছে যে, অচিরেই রুশ রাষ্ট্রপ্রধানকে ক্যানসার সারাতে অস্ত্রোপচারও করাতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু দিনের জন্য ‘ছুটি’ নিতে পারেন পুতিন!
ক্রেমলিনের এক বিশ্বস্ত সূত্রকে উল্লেখ করে এই দাবি করে ওই সংবাদ সংস্থাটি। দাবি, অবস্থা এতটাই গুরুতর যে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন পুতিন। তার অবর্তমানে সেই দায়িত্ব নিতে পারেন রুশ নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান নিকোলাই পাত্রুশেভ।
ওই সূত্রেরই খবর, অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই ব্যবস্থাপনায় রাজি হয়েছেন পুতিন।।তবে সংবাদ সংস্থাটির ওই দাবি কতটা সত্যি তা নিয়ে ক্রেমলিন একটি কথাও বলেনি।
রুশ রাষ্ট্রনায়কের স্বাস্থ্য গত কয়েক দিন ধরেই আলোচনায়। কিন্তু ক্রেমলিন বরাবরই পুতিনের অসুস্থতা সংক্রান্ত সবরকম দাবি নাকচ করে এসেছে। যদিও তাতে আলোচনা থামেনি। ক্রেমলিন যা-ই বলুক, পুতিন কোন রোগে আক্রান্ত তার বিভিন্ন রকম সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জোর জল্পনা চলে প্রায় রোজই।
আলোচনার মূলে আসলে পুতিনের কয়েকটি ভিডিও। যেখানে রুশ রাষ্ট্রপ্রধানের আচার আচরণে কিছু কিছু অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করেছেন পর্যবেক্ষকরা। কোথাও তাকে দেখা গিয়েছে ১২ মিনিট ধরে চলা বৈঠকের পুরো সময় জুড়ে একটি হাত টেবলের কোনায় ভর দিয়ে রাখতে। যা দেখে পর্যবেক্ষকদের ধারণা, পুতিন স্নায়ুর রোগ পারকিনসন্সে আক্রান্ত। এ রোগে হাতে অস্বাভাবিক কাঁপুনি লক্ষ্য করা যায়। তাদের দাবি, পুতিন ওই কাঁপুনি এড়াতেই ও ভাবে হাত রেখেছিলেন টেবলের কোনায়।
অনেকে তার মুখ অস্বাভাবিক রকমের ফুলে থাকা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। পুতিনের পা ছড়িয়ে বসার ভঙ্গি বা অধৈর্য্য ভাবে পা নাড়ানো দেখেও তার অসুস্থতার কথা বলেছেন কেউ কেউ। ভিডিও-তে পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর রেখে কেউ আবার এমন সিদ্ধান্তেও পৌঁছেছেন পুতিন জড়ানো স্বরে কথা বলছেন। কারণ উল্টো দিকের মানুষটির চোখে মুখে না বুঝতে পারার ছাপ নাকি স্পষ্ট।
তবে টেলিগ্রাম চ্যানেল জেনারেল এসভিআর সম্প্রতি ক্রেমলিনের সূত্র উল্লেখ করে যে দাবিটি করেছে, তা এর আগে কেউ করেনি। এসভিআর জানিয়েছে, পুতিন থাইরয়েডের ক্যনসারে আক্রান্ত। রোগটির চিকিৎসা এপ্রিলেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুতিনই নাকি চাননি অস্ত্রোপচার করাতে।
কেন অস্ত্রোপচার করাতে চাননি পুতিন? ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ তার কারণ কি না বা যুদ্ধ পরবর্তী রুশ অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য পুতিনের এমন সিদ্ধান্ত কি না তা স্পষ্ট নয়। তবে ওই চ্যানেল ক্রেমলিনের ওই সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ৯ মে-র আগে অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। পুতিন নিজেই তারিখ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
ওই চ্যানেলটির দাবি, পুতিনের রোগের পরিস্থিতি সম্ভবত খুব গুরুতর নয়। তবে তার অস্ত্রোপচারে বিশেষ দেরি করা যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ঠিক কী কী সমস্যায় ভুগছেন পুতিন? এসভিআরের কথায়, ক্যানসার ছাড়াও পুতিনের পারকিনসন্স রয়েছে। এ ছাড়া সিজোএফেক্টিভ ডিজঅর্ডারের সমস্যাও রয়েছে। এই দ্বিতীয় রোগটির কারণে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে পুতিনের। তার হ্যালুসিনেশন বা অতিরঞ্জিত কল্পনাপ্রবণতা এবং ম্যানিয়া অর্থাৎ বাতিকগ্রস্ততার সমস্যাও আছে।
চ্যানেলটি ক্রেমলিনের যে সূত্রের কথা উল্লেখ করেছে, তিনি রাশিয়ার উচ্চপদস্থ সেনাকর্তা বলে দাবি এসভিআরের। ওই সেনাকর্তা না কি চ্যানেলটিকে এ কথাও বলেছেন, চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, পুতিনের অবিলম্বে অস্ত্রোপচার হওয়া দরকার। তবে অস্ত্রোপচার হওয়ার পর তিনি কত দিন অক্ষম থাকবেন তা এখনও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। যত দিন না তিনি সুস্থ হচ্ছেন তত দিন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থাকবে পাত্রুশেভের হাতে।
সাধারণত, দেশের প্রেসিডেন্ট অসুস্থ হলে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই ক্ষমতা আসার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। ক্রেমলিন সূত্রে ওই চ্যানেলটিকে বলা হয়েছে। পুতিন ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি ছিলেন না। বদলে তিনি চেয়েছিলেন যে অল্প সময় তিনি নিয়ন্ত্রণে থাকবেন না, তখন কাউকে সাময়িক দেখাশোনার ভার দেওয়া হোক যিনি দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে অভিজ্ঞ হাতে সামলাতে পারবেন।
নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান ৭০ বছরের পাত্রুশেভ এককালে রাশিয়ান চরদের প্রধান ছিলেন। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রাথমিক লেখচিত্রও তাঁরই করা। তাঁকে এই ভার দিতে রাজি হওয়ার আগে পুতিন দু’ঘণ্টা একান্তে কথা বলেন পাত্রুশেভের সঙ্গে।
সেই একান্ত বার্তালাপে না কি পুতিন স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিয়েছেন, একমাত্র পাত্রুশেভই তাঁর বিশ্বস্ত। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পর যদি পুতিনের শারীরিক অবস্থার অবনতিও হয়, তবে পাত্রুশেভের উপরই অস্থায়ী ভাবে দায়িত্ব বর্তাবে রাশিয়ার।
জেনারেল এসভিআর নামে ওই চ্যানেলটি পুতিনের অসুস্থতা সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, সবটাই তারা পেয়েছে ক্রেমলিনের ওই বিশ্বস্ত সূত্র মারফৎ।
যে রিপোর্টের ভিত্তিতে পুতিনের থাইরয়েড ক্যানসারের কথা জানিয়েছে এসভিআর, তা আদতে এক সাংবাদিকের রিপোর্টে জানতে পারে তারা। ওই সাংবাদিক তদন্তমূলক সাংবাদিকতার জন্য বিখ্যাত। তবে রাশিয়া থেকে তিনি বর্তমানে নির্বাসিত। তিনিই পুতিনের থাইরয়েড ক্যানসারের কথা জানান, এমনকি এ-ও বলেন, পুতিনকে সর্বক্ষণ ঘিরে থাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল।
চ্যানেলটি জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ পুতিন। এর আগে তার চিকিৎসা চলছিল। পশ্চিমের দেশগুলি থেকে ওষুধ আসছিল তার চিকিৎসার জন্য। পুতিনের রোগের তীব্রতা অনুযায়ী বেশি মাত্রার ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। কিন্তু পরে সেই ওষুধ বদলাতে হয়।
নতুন ওষুধ খাওয়া শুরু করার পর নাকি বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় পুতিনের। তার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নতুন ওষুধগুলি যে দেশ থেকে আনানো হয়েছিল, তারা রাশিয়ার বন্ধু দেশ নয়। পুতিনকে দেওয়ার আগে ওষুধগুলি পরীক্ষাও করানো হয়েছিল।
ক্রেমলিনের সূত্র চ্যানেলটিকে জানিয়েছে, এর পর প্রায় এক মাস ধরে ওষুধ বদলানোর জন্য পুতিনকে রাজি করানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি রাজি হননি। নতুন ওষুধের ফের কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এই ভয়েই সম্ভবত পুতিন আর এগোতে চাননি। তাতেই জরুরি হয়ে পড়ে অস্ত্রোপচার।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ