ভারতে কৃষকদের বিদ্রোহ ঘিরে রাজনীতির মাঠ-ময়দান সরগরম। কৃষকদের ডাকা ভারত বনধকে সমর্থন জানিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল। এ প্রেক্ষাপটে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে বাক-যুদ্ধে ঘায়েল করতে মাঠে নেমেছে বিজেপি। বিরোধীরা দ্বিচারিতা করছে বলে সোচ্চার হয়েছে মোদী সমর্থিত বাহিনী। তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের পাশে যে দলগুলো দাঁড়িয়েছে, তাদের অধিকাংশই অতীতে অনেক আইন প্রণয়নকে সমর্থন করেছে, এমন কথাই বলেছে বিজেপি।
সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির শীর্ষ নেতা রবিশংকর প্রসাদ অভিযোগ করেছেন যে, কৃষকদের একটা অংশ কয়েকটা লোকের কবলে পড়েছেন, যাঁদের নিজেদের স্বার্থ রয়েছে।
২০১৯ সালে কংগ্রেসের ইস্তেহার পাঠ করে প্রসাদ বলেন যে, সেসময় দল এপিএমসি আইন বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাঁর দাবি, ২০১৩ সালে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সব কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নির্দেশ যেন যে, এপিএমসি থেকে ফল-সবজিকে বাদ দিতে এবং খোলা বাজারে সরাসরি বিক্রি করতে দেওয়া হোক।
শরদ পাওয়ারকে নিশানা করে প্রসাদ বলেছেন, ইউপিএ সরকারে তৎকালীন কৃষি মন্ত্রী তথা এনসিপি সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, যাতে কৃষি ক্ষেত্রে বেসরকারি সেক্টর অংশ নিতে পারে।
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে হাজার হাজার কৃষকের আন্দোলন দেখছে গোটা ভারত। ট্রাক্টর, ট্রলিতে করে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে তাঁরা আজ রাস্তায় একজোট হয়েছে সদ্য পাশ হওয়া কৃষি বিলের বিরুদ্ধে। কী করোনা? কোথায় শীত? পেটের দায়, আগামী প্রজন্মের চিন্তায় ক্ষুব্ধ কৃষকরা ভীড় জমিয়েছেন রাজধানী দিল্লীর রাজপথে। যাঁদের কিনা ‘ঠান্ডা’ করতে রাস্তায় নেমেছে পুলিশ বাহিনী। গোটা দেশের মুখে যাঁরা অন্ন জোগান দেয়, সেই অন্নদাতাদের প্রতিদানে জুটছে কখনও লাঠির ঘা, কখনও বা আবার অপমান। ভারতের কৃষকদের প্রতি হওয়া এই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি বিরোধী শিবির একাত্মতা ঘোষনা করেছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক্টিভিস্টরাও কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভারতের অনলাইন কৃষকদের পক্ষে ফুঁসে উঠেছে।
তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার ভারত বনধ ডেকেছেন কৃষকরা। বনধের আগের দিন দেশজুড়ে অ্যাডভাইসরি জারি করছে কেন্দ্রিয় সরকার। কৃষকদের ডাকা বনধে শান্তি বজায় রাখতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে নিরাপত্তা জোরদার করতে নির্দেশ দিয়েছে মোদী সরকার। উল্লেখ্য, কৃষকদের ডাকা ভারত বনধকে সমর্থন জানিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল।
অ্যাডভাইসরিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, করোনার গাইডলাইন যাতে যথাযথভাবে পালন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে। ভারত বনধ চলাকালীন যেন শান্তি বজায় থাকে, তাও সুনিশ্চিত করতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে, কেন্দ্রের নির্দেশিকায় এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে।
কৃষকদের আন্দোলনের পাশি দাঁড়িয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল। তবে, কৃষকরা শর্ত দিয়েছেন নিজেদের ব্যানার ছেড়ে বনধে শামিল হতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। এই বনধকে সমর্থন জানিয়েছে ১৫টি দল। ভারত বনধকে সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস, এনসিপি, ডিএমকে, আপ, আরজেডি, সপা, বসপা, উপত্য়কার গুপকর দল, বামেরা। কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে, যেহেতু মমতা সরকারের নীতি বনধ বিরোধী। তাই তারা কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাবে। মঙ্গলবার ব্লকে ব্লকে ধর্না কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রের এহেন অ্যাডভাইসরি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
এসডব্লিউ/নসদ/১০২০
আপনার মতামত জানানঃ