‘‘নগরের যানজট যদি ৬০ শতাংশ কমানো যায় তবে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো যাবে৷”- বলেছিলেন অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন৷ তবে এটা এই বলা অব্দি। প্রতিনিয়ত যানজট হয়ে উঠছে অসহনীয়। ঢাকার গলার কাঁটা। তবু নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। আর পরিণতিতে এবার রাজধানীতে গাড়ির গতির থেকে বেশি পায়ের গতি।
যানজট বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার যেন চিরসঙ্গী। গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার (১৬ মার্চ) সকাল থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতে তীব্র যানজট লেগে আছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে স্কুল-কলেজ-অফিসগামী যাত্রীদের।
যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসীর অনেককে বাস থেকে নেমে হেঁচে চলাচল করতে দেখা গেছে। রাস্তায় যানবাহনের চেয়ে পায়ের গতি বেশি দেখা গেছে।
গাড়ির থেকে পায়ের গতি বেশি
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় বলা হয়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া যে কোনো কর্মদিবসে ঢাকায় গড় ট্রাফিকের গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬.৪ কিলোমিটার। যা পায়ে হাঁটার গতির চেয়ে সামান্য কিছু বেশি। অথচ মাত্র ১২ বছর আগেও শহরে মোটর গাড়ির গড় গতি ছিল প্রায় ২১ কিলোমিটার।
পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি বর্তমান গতিতে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলে ২০৩৫ সাল নাগাদ তা ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটারে নেমে যেতে পারে। অথচ ঢাকায় যানজট নিরসনে গত এক দশকে সরকার প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
বুয়েটের গবেষণায় আরও বলা হয়, রাজধানী ঢাকার যানজট ৬০ শতাংশ কমাতে পারলে দেশের উৎপাদনশীলতার দিক থেকে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতো।
এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হল। বুধবার সকাল ৭টার পর থেকেই রাজধানীর মিরপুর, জাতীয় প্রেস ক্লাব, মৌচাক, মগবাজার, বেইলী রোড, মতিঝিল, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, তালতলা, বিজয় সরণি, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, বনানী, খিলক্ষেত, বাড্ডা ও উত্তরা এসব পথে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, কাওরান বাজার, মহাখালী, খিলক্ষেত, উত্তরা, ফার্মগেট, শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছেন, স্কুল-কলেজ-অফিসগামী ও কাজে বের হওয়া মানুষরা।
সকালে বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট লেগে যায়। উত্তরা থেকে খিলক্ষেত, বনানী হয়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত। এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড-রামপুরা রোডে যাতায়াতকারীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়।
খিলক্ষেত থেকে পান্থপথ এলাকায় পরীক্ষা দিতে রওনা হন হাসান নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় খিলক্ষেত থেকে বাসে উঠে ফার্মগেট আসতে সময় লেগেছে ২ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। অন্যসময় যেখানে আসতে সময় লাগে ৩০ তেকে ৪০ মিনিট। সকাল ১০টায় আমার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যানজটে সময় মতো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারলাম না।
একইরকম অভিজ্ঞতার কথা জানালেন রাজধানীর খিলগাঁও থেকে কাওরান বাজারে অফিস করতে আসা কাওসার আলম। তিনি বলেন, ‘দুদিন ধরেই অফিসে যেতে দেরি হচ্ছে। আজও রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট। শাহজাহানপুর থেকে কাওরান বাজার আসতে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট।’
যানজটে ভোগান্তি নিয়ে মিতুল হাসান বলেন, ‘কুড়িল থেকে ৩ ঘণ্টায়ও ফার্মগেটের অফিসে আসতে পারিনি।’
যানজট নিয়ে সিএনজিচালক মৃধা আলাউদ্দিন বলেন, ‘উত্তরা থেকে যাত্রী নিয়ে মগবাজার আসতে অসহ্য যানজটের পড়তে হয়েছে। প্রায় চার ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে আমার। এমন যানজটে পড়তে হবে জানলে রাস্তায় বের হতাম না।’
সায়দাবাদ থেকে উত্তরার দিকে যাওয়া যাত্রী বিল্লাল হোসেন বলেন, সায়দাবাদ থেকে কুড়িল পর্যন্ত আসতেই আমার আগের তুলনায় দুই ঘণ্টা বেশি লেগেছে। সড়কজুড়ে যানজট, দিন যত যাচ্ছে রাজধানীতে যানজটে পরিমাণ ততই বাড়ছে। আগে দেখা যেতো শুধু সকালে আর বিকেলে যানজট থাকতো। কিন্তু এখন দেখছি সারাদিনই রাজধানীতে যানজট লেগে থাকে।
কেন হঠাৎ এই অবনতি?
যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসীর অনেককে বাস থেকে নেমে হেঁচে চলাচল করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোদমে খোলা হওয়ায় চাপ পড়েছে সড়কে।
নগর পরিকল্পনাবীদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘যানজট আগেও হতো। তবে এবারের যানজটের কারণ হলো অনেক দিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। তাই রাস্তায় আগের তুলনায় গাড়ি বেড়েছে। আর অভিভাবকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বা আশেপাশে গাড়ি পার্ক করেছেন। তাই সড়কে যানজটও বেড়েছে।’
এই ব্যাপারে রমনা ট্রাফিক ডিভিশনের সার্জেন্ট তপু শেখ বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে সশরীরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হওয়ায় গাড়ির চাপ বেশি দেখা গেছে। এই কারণে মূলত সড়কে যানজট বেড়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’
প্রসঙ্গত, প্রায় দুই বছর পরে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে সারাদেশের মতো রাজধানীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পাঠদান শুরু হয়েছে। এদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে দেখা যায় অভিভাবকদের। এরসঙ্গে অফিসগামী ও সাধারণ মানুষসহ রাস্তায় যাতায়াতকারী যাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আর বাড়তি মানুষ চলাচলের কারণে মূলত যানজট বেড়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯২২
আপনার মতামত জানানঃ