নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য ভোজ্যতেল ও চিনি থেকে ভ্যাট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, সয়াবিন তেলে ২০ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবত থাকবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমতে পারে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। আবার আমদানিকারকরা পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যারা সিন্ডিকেট করে মুনাফা নেওয়ার চেষ্টা করে তারা এবার সুযোগ পাবে না।
কারণ সরকার টিসিবিকে শক্তিশালী করছে। টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহ করা হবে। টিসিবিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তবে ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে এনবিআর কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর হয় না।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস নীতি) মো. মাসুদ সাদিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই মুহূর্তে বাজেট সভা করতে রাজশাহীতে রয়েছি। এ বিষয়ে কিছু জানি না। ফলে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
সম্প্রতি ভোজ্যতেলের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। যদিও সেই প্রস্তাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সায় দেয়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে ভোজ্যতেল আমদানিতে যে পরিমাণ ভ্যাট নেওয়া হয় সেটা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। এই সংকটময় সময়ে সরকার আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট তুলে নিলে ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
এদিকে আজ এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এক সভায় সংগঠনটির আহ্বায়ক ড দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ যেসব আমদানিনির্ভর পণ্য বেশি ব্যবহার করেন, সেগুলোর ওপর থেকে সরকারের শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন।
ক্রয় কমিটির সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৮টি প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রস্তাব রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে ছোলা, মসুর, ডাল ও সয়াবিন কিনে জনগণের মধ্যে বিতরণ করবে। টিসিবি’র প্রতি কেজি চিনি ৭৯ টাকা, ছোলা ৮১ টাকা ৪০ পয়সা, মসুর ডাল ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা দরে কিনছে।
দেশে ভোজ্যতেলের মজুত কতটা?
ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদেন দেখা গেছে, সমিতির সদস্য ছয় কোম্পানির কাছে বর্তমানে এক লাখ ৯৫ হাজার ৬৩৬ টন ভোজ্যতেল মজুত রয়েছে।
এর মধ্যে পরিশোধিত ভোজ্যতেল ১৯ হাজার ৭৩৭ টন এবং অপরিশোধিত ভোজ্যতেল এক লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৯ টন। আর আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৮০০ টনের।
ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মজুত তেলের মধ্যে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে সিটি গ্রুপের কাছে রয়েছে ৩৯ হাজার ৯৭৮ টন, মেঘনা গ্রুপের ৫০ হাজার, টি কে গ্রুপের ৩৭ হাজার ৪৫৯ টন, এস আলমের ৫২ হাজার ৮১৮ টন, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রয়েছে ১৫ হাজার ৩০৯ টন এবং গ্লোব এডিবল অয়েলের রয়েছে ৭২ টন।
তবে বসুন্ধরা গ্রুপসহ অন্য যেসব ভোজ্যতেল প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের কাছে কত পরিমাণ মজুত রয়েছে সেই বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে তথ্য নেই।
বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে বছরে মোট ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এতে মাসে গড়ে দেড় লাখ টনের কিছু বেশি ভোজ্যতেল দরকার পড়ে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর কাছে প্রায় দুই লাখ টন মজুত রয়েছে। গত বছর আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ৭১ হাজার টন।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, বন্দরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল বোঝাই তিনটি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে সুমাত্রা পাম জাহাজে ১১ হাজার ৯৯৯ টন, সান জিনে ১২ হাজার টন ও পিভিটি নেপচুনে ১২ হাজার টন ভোজ্যতেল রয়েছে। বন্দর সূত্র জানায়, এক সপ্তাহের মধ্যে আরও কয়েকটি জাহাজভোজ্য তেল নিয়ে ভিড়তে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৫৫
আপনার মতামত জানানঃ