সম্প্রতি হলোকাস্ট স্মরণ দিবস উপলক্ষে এক বার্তায় আলবেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অল্টা জাসকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের বাঁচাতে তার দেশের জনগণের অবদানকে আবারও স্মরণ করলেন।
বর্তমানে ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরোধ দেখা গেলেও একসময় ইহুদিদের আন্তরিকভাবে রক্ষা করেছিল ইউরোপের মুসলিম দেশ আলবেনিয়া।
হলোকাস্ট স্মরণ দিবস উপলক্ষে এক বার্তায় আলবেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অল্টা জাসকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের বাঁচাতে তার দেশের জনগণের অবদানকে আবারও স্মরণ করলেন।
গেজেটাটিমার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হলোকাস্ট স্মরণ দিবস উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বার্তায় অল্টা জাসকা বলেছেন, নাৎসিদের হাতে প্রাণ হারানো লাখ লাখ নিরীহ ইহুদির প্রতি আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
একই সঙ্গে একজন আলবেনীয় হিসেবে আমরা গর্বিত, কারণ সে সময় আমাদের দেশে আসা ইহুদিদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি, রক্ষা করেছি; যা জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আমাদের জাতিকে ন্যায়নিষ্ঠ জাতি হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
ইউরোপের ছোট্ট একটি দেশ আলবেনিয়া। ২৮ লাখ জনসংখ্যার মুসলিম অধ্যুষিত এ দেশটিতে কেবল ৪০ থেকে ৫০ জন ইহুদির বাস।
অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের হাত থেকে এ দেশটি হাজারও ইহুদিকে রক্ষা করেছিল।
১৯৩৩ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল আট লাখ। এর মাঝে ইহুদিদের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০০। কিন্তু হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় এলে ইউরোপজুড়ে শুরু হয় ইহুদি নিধন। হিটলারের হাত থেকে বাঁচতে ইহুদিরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে থাকে।
আলবেনিয়াতেও হাজির হয় হাজারের ওপর ইহুদি। একসময় ১৯৪৩ সালে নাৎসি জার্মানি আলবেনিয়া দখল করলে স্থানীয়দের ইহুদিদের তালিকা দিতে বলে, যাতে তাদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া যায়।
সে সময় আলবেনীয়রা ইহুদিদের পরিচয় ফাঁস করতে অস্বীকার করে। বরং দেশটির সরকার ইহুদিদের নকল কাগজপত্র বানিয়ে দেয়, যাতে তারা নিজের ইহুদি পরিচয় গোপন করতে পারে।
জার্মানির হামবুর্গে বসবাস করতো জোহান্না নিউম্যানের পরিবার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর ইহুদিবিরোধী গণহত্যা শুরু হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি চেয়েও পায়নি। আরো অনেক পরিবারের মতো বাবা-মায়ের সাথে আলবেনিয়ায় পালিয়ে যায় আট বছরের জোহান্না। একটি মুসলিম পরিবার আশ্রয় দেয় তাদের। কিন্তু সেখানেও হানা দেয় জার্মান বাহিনী।
জার্মান বাহিনীর কাছে সেই পরিবারটি জোহান্না ও তার মাকে নিজেদের পরিবারের সদস্য বলে পরিচয় দেয়, যা ছিল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কোনোভাবে ধরা পড়লে ইহুদিদের আশ্রয় দেয়ার ‘অপরাধে’ তাদেরও মেরে ফেলত হিটলারের সৈন্যরা। তবুও সম্পূর্ণ মানবিক কারণেই দুটি জীবন বাঁচাতে এত বড় ঝুঁকি নিয়েছিল আলবেনীয় পরিবারটি।
জোহান্নার পরিবার একটি উদাহরণ মাত্র। কিংবা তিউনিসিয়ার খালেদ আবদুল ওয়াহাব, যিনি দুই ডজন ইহুদিকে আশ্রয় দিয়েছেন। ইরানি কূটনীতিক আবদুল হোসেইন সারদারি, যিনি হাজার হাজার ইহুদিকে ইরানি পাসপোর্টে জার্মানি ত্যাগ করতে সাহায্য করেছেন।
অথচ বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট তার দেশে ইহুদি উদ্বাস্তুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। প্রাণ বাঁচাতে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করলেও ইহুদিদের ফিরিয়ে দেয় তারা। ইউরোপের দেশগুলোও প্রত্যাশামতো বাড়ায়নি সহযোগিতার হাত। কিন্তু তখন অনেক ইহুদির জীবন বাঁচিয়েছে মুসলমানরা, আদতে ইহুদিরা যাদের শত্রু বলেই গণ্য করে। মতপার্থক্য ভুলে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোকেই তারা সবচেয়ে জরুরি মনে করেছেন।
দুই হাজারের বেশি জার্মান ইহুদি আশ্রয় নিয়েছিল মুসিলমপ্রধান দেশ আলবেনিয়ায়। যাদের জার্মান বাহিনীর হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছে স্থানীয়রা। সুযোগ দিয়েছে বসবাসের।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮১৫
আপনার মতামত জানানঃ