মৌলভীবাজারের দলিত সম্প্রদায় ঋষিদের (মুচি) চৌমুহনা থেকে উচ্ছেদ করেছে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা। দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গায় কাজ করে যাওয়া মুচিদের উচ্ছেদ করায় বেকায়দায় পড়েছেন তারা। ঋষিরা জুতা সেলাই করার সরঞ্চাম নিয়ে কাজ করতে না পারায়, ২ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে চৌমুহনা এলাকায় অবস্থান কর্মসূচী করে। গত মঙ্গলবার সকালে তাদের চৌমুহনা সংলগ্ন ড্রেনের ওপর থেকে উচ্ছেদ করে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা।
পরিবার-পরিজন নিয়ে বেকায়দায় পড়া ঋষিরা জানান, আমাদের এভাবে হঠাৎ উচ্ছেদ করায় পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। তাদের দাবি, উচ্ছেদের আগে তাদের অন্য একটি জায়গায় বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
নগর ঋষিরা গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে জুতা সেলাইয়ের কাজ করছি। আমাদের বাপ দাদাও এখানে বসে জুতা সেলাই করেছেন। এখন হঠাৎ করে পৌরসভার লোকজন আমাদের এখান থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। আমরা রাস্তার পাশের ঢাকনা বিহীন ড্রেনের উপরে কাঠ দিয়ে মাচা করে বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করি। এখানে আমাদের জন্য রাস্তায় চলাচলে কিংবা যানজট লাগছে না। আমাদের এভাবে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করার ফলে আমরা দুই দিন ধরে কাজ না করে আছি। আমরা এখন কোথা বসে কাজ করবো বুঝতে পারছি না।
ঋষিদের উচ্ছেদ সম্পর্কে পৌরসভার মেয়র মহসিন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, চৌমুহনা এলাকায় লোকজন গাড়ি থামিয়ে এখানে জুতা সেলাই করান। এ কারণে এখানে যানজট হয়। ঋষি সম্প্রদায়ের পুনর্বাসনের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা এখানে ছিলই অবৈধভাবে, এখানে তো তাদের বসার কথাই নেই।
মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক এসকে দাশ সুমন বলেন, ঋষি বা দলিত যাই বলি না কেন এরা এমনিতেই বৈষম্যের শিকার। তারা তাদের মৌলিক অধিকারের অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। তারা ভালো কোন জায়গায় চাকরিও পায় না। পুরো শহরেই তো ফুতপাত দখল করে অবৈধ ব্যবসা হচ্ছে। পৌরসভা এসব বিষয় না দেখে শুধুমাত্র তাদেরই কেন উচ্ছেদ করলো সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। যদি তাদের এই জায়গা থেকে উচ্ছেদই করার হয় তাহলে তাদের নতুন জায়গায় বসিয়ে তা করা হোক। না হলে এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে বলে আমরা মনে করি।
শ্রীমঙ্গল ইউএনও নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজন আমার কাছে এসেছিলেন। বিষয়টি পৌরসভার দায়িত্ব। তবে পৌরসভা যদি এই জায়গা থেকে তাদের উচ্ছেদ করে তাহলে তাদের নতুন একটি জায়গা দিক। এই দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনকে এভাবে উচ্ছেদ করা ঠিক হবে না।
মিই/নসদ/২০২৩
আপনার মতামত জানানঃ