থিয়ার সাথে সংঘর্ষের ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পৃথিবী। থিয়া একটি গ্রহাণু। মোটামুটি মঙ্গলের আকৃতির এই গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষ হয় পৃথিবীর। পৃথিবী মোটামুটি আস্তই থাকে কিন্তু বায়ুমণ্ডল উবে যায় আর ধ্বংস হয়ে যায় এই গ্রহাণুটি। এর ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি হয় চাঁদ। ওই সময় পৃথিবীতে টগবগ করে ফুটতে থাকা গলিত লাভার সমুদ্র চারিদিকে। শুক্র গ্রহের অবস্থা এখন যেমন, তখন পৃথিবীর অবস্থা ছিল ঠিক তেমন’ই।
আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হয় পৃথিবী, লাভা জমাট বেঁধে তৈরি করে পাথর আর জল জমে সৃষ্টি হয় পৃথিবীর প্রথম সাগর-মহাসাগর। এ সময়ে তৈরি হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম খনিজ, জিরকন। এদের বয়স মোটামুটি ৪.৪ বিলিয়ন বছর। এরপর অবিরাম বৃষ্টির পর নীলগ্রহ ঢাকা পড়ে যায় জলরাশির তলায়। আরও বহু বহু বছর পর সমুদ্রের তলা থেকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে স্থলভূমি। জন্ম নেয় মহাদেশ।
এতদিন পর্যন্ত মনে করা হত, আজ থেকে প্রায় ২৫০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল সেই স্থলভাগ। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় পাল্টে দিল সেই ধারণাকে। মহাসাগরের বুক থেকে প্রথম স্থলভূমি উঠে এসেছিল তারও প্রায় ৭০ কোটি বছর আগে। আর সেই প্রাচীনতম ভূভাগের জন্ম হয়েছিল এই এশিয়ায়; ভারতের বুকে।
এমনটাই জানাচ্ছেন মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের সিংভূমই বিশ্বের প্রাচীনতম স্থলভূমি। সংশ্লিষ্ট গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রবাসী বাঙালি অধ্যাপিকা ডঃ প্রিয়দর্শী চৌধুরী। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার আরও বেশি কিছু বিজ্ঞানী।
সিংভূমের ভূপ্রকৃতি চিরকালই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভূতাত্ত্বিকদের। আর তার অন্যতম কারণ হল এই অঞ্চলের শিলার প্রাচীনত্ব। সেই শিলাস্তরের পরীক্ষা করতে গিয়েই একটি বিশেষ পাললিক শিলার সন্ধান পান গবেষকরা।
পরীক্ষায় উঠে আসে, ওই শিলা তৈরি হয়েছিল নদী, সমুদ্রস্রোত এবং জোয়ারের জলের প্রবাহে। ইউরেনিয়াম ডেটিং জানায়, সেই পাথরের বয়স কমপক্ষে ৩২০ কোটি বছর।
অথচ, সিংভূমের মালভূমি অঞ্চলের বাইরের ভূপ্রাকৃতিক আবরণ গঠিত হয়েছে আগ্নেয়শিলা গ্রানাইটের মাধ্যমে। সেখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, আগ্নেয়শিলা গঠিত ভূত্বকের পূর্বে পাললিক শিলায় তৈরি ভূত্বক প্রথম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল মহাসাগরের বুক থেকে।
সিংভূমের মতো আদিম ভূখণ্ডের জন্ম হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকাতেও। সাম্প্রতিক এই গবেষণা থেকে ভাঙল আরও একটি অতিপ্রচলিত ধারণা। এতদিন মনে করা হত, টেকটনিক পাতের পরিচলনের ফলেই তৈরি হয়েছে মহাদেশ। ঠিক যেভাবে হিমালয়ের উচ্চতা বেড়ে চলেছে এখন, সেভাবেই আড়াইশো কোটি বছর আগে জন্মেছিল মহাদেশ। এবার ভাঙল সেই ধারণাও।
গবেষকদের অনুমান অনুযায়ী, সমুদ্রস্রোতের পলি থেকেই জন্ম নিয়েছিল পৃথিবীর প্রাচীনতম ভূখণ্ড তথা অধুনা সিংভূম। পরবর্তীকালে টেকটনিক প্লেটের সরণের কারণে ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা বেরিয়ে এসে তৈরি হয় কঠিন আবরণ। গন্ডোয়ানা ল্যান্ডের জন্মও তারপরে।
কিছুদিন আগে আরও একদল বাঙালি গবেষকের গবেষণাতে উঠে এসেছিল একই তথ্য। জানা গিয়েছিল, গণ্ডোয়ানা ল্যান্ড বা সংযুক্ত মহাদেশের আগেও বিচ্ছিন্ন মহাদেশের অস্তিত্ব ছিল পৃথিবীতে। তবে সেই গবেষণা এবং দাবি নিয়ে বিতর্কও উঠেছিল বেশ। এবার সেই তত্ত্বকেই যেন আরও একবার সমর্থন জানাল মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৫০
আপনার মতামত জানানঃ