স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি নথি গায়েব হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি নজরে আসে মন্ত্রণালয়ের। ওই দিনই শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। যে নথিগুলো খোয়া গেছে সেগুলোর সিংহভাগই স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের অধীন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিভাগের কেনাকাটা সম্পর্কিত।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ফাইল হারিয়ে যাওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি জিডি করেছে। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় সচিবালয় বন্ধ ছিল। আগামীকাল রোববার থেকে তদন্ত শুরু হবে।
তবে একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে, ফাইল খোয়া যাওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবারই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ সুপার মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ক্রাইম সিন ইউনিট সচিবালয়ে যায়। সিআইডির কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। জিডি করার ৪৮ ঘণ্টা পরও ফাইলগুলো কে সরাল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি মন্ত্রণালয় বা পুলিশ—কোনো পক্ষই।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষের লাগোয়া ঘর থেকে নথিগুলো হারিয়ে যায়। শাহাদৎ হোসাইন সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের ২৯ নম্বর কক্ষে বসেন। পাশের লাগোয়া ঘরটিতে বসেন ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২–এর সাঁটমুদ্রাক্ষরিক ও কম্পিউটার অপারেটর মো. জোসেফ সরদার ও আয়েশা সিদ্দিকা। ফাইলগুলো এই দুই কর্মীর কেবিনেটে ছিল।
জিডি বলা হয়েছে, গত ২৭ অক্টোবর বুধবার অফিস করে নথিগুলো ফাইল কেবিনেটে রাখা হয়। পরদিন দুপুর ১২টায় কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় ফাইলগুলো কেবিনেটের মধ্যে নেই।
যে নথিগুলো খোয়া গেছে সেগুলোর সিংহভাগই স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের অধীন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিভাগের কেনাকাটা সম্পর্কিত।
জিডিতে ১৭টি নথির নম্বর ও বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজের কেনাকাটা সংক্রান্ত একাধিক নথি, ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, রিপোর্ট অধিদপ্তরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয় সংক্রান্ত নথি।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাদিক প্রকল্পের নথি খোয়া গেছে বলেও জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
জিডি করার ৪৮ ঘণ্টা পরও ফাইলগুলো কে সরাল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি মন্ত্রণালয় বা পুলিশ—কোনো পক্ষই।
অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইন বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের পাঁচটি গাড়ি কেনা, মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের জন্য বরাদ্দের নথি ছিল। সবকিছু নির্দিষ্ট করে আসলে এখন বলা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরসহ কিছু প্রকল্পের নথি সেখানে ছিল।
নকল চাবি দিয়ে তালা খোলা হয়েছে বলে ধারণার কথা জানান শাহাদাৎ হোসাইন। তিনি বলেন, সব গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়েছে। গায়েবের কারণ ও জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। নথিগুলো উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। নথিগুলো চলমান ছিল না বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূর জানান, অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন। যেহেতু তদন্ত চলছে, এখন আর কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ্আলমের নেতৃত্বে সেই কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে বলেও জানান আলী নূর।
তবে জিডি করার পরপরই ছুটির দিন পরে যাওয়ায় এখনো তেমন নিশ্চিত তথ্য আসেনি তদন্ত সংস্থার হাতে।
এদিকে ফাইল খোয়া যাওয়ার ঘটনার অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবারই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আন অফিশিয়ালি কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে সিআইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নথি গায়েবের ঘটনায় শাহবাগ থানায় জিডি হয়েছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট সংশ্লিষ্ট সচিবালয় পরিদর্শন করেছে। মামলা হলে এটা নিয়ে সিআইডি আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল কিংবা মেডিক্যাল কলেজের কেনাকেটায় অনিয়ম ও কোটি কোটি টাকা লুটপাটের খবর আসে, বিশেষ করে করোনা মহামারির এই দুর্যোগ সময়ে বেশি। দেশের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রায় প্রতিটা প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে নানা রকম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। কয়েকদিন ধরেও বিভিন্ন হাসপাতালের দুর্নীতির সংবাদ আসে গণমাধ্যমে। এমন সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আচানক নথি গায়েব সন্দেহের উদ্রেক করে। এবিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত, নথি গায়েব হয়েছে নাকি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। যদিও গায়েব করে দেওয়া হলে তদন্তে সেটা কখনো উঠে আসবেও না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৮
আপনার মতামত জানানঃ