মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার মধ্যে খাদ্য প্রথম। সেই খাদ্যের জোগানের একমাত্র মাধ্যম কৃষি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা অধ্যুষিত বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এখনো খাদ্যের অভাবে ধুঁকে মরছে। করোনা মহামারি যেন জ্বলে আসা আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। এতে নতুন দরিদ্র হয়েছে আরও অনেকে। তবে একদিকে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ও খাদ্য সংকট বাড়লেও অন্যদিকে বিশ্বে বাড়ছে অতিধনীদের সংখ্যা। অল্প কিছু অতিধনী সাহায্য করলে বিশ্বের চলমান খাদ্যসংকট মেটানো সম্ভব বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পরিচালক ডেভিড বিসলি।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পরিচালক ডেভিড বিসলি বলেছেন, এসব ধনকুবের যদি তাদের সম্পদের সামান্য অংশ দান করেন, তাহলে বিশ্বের বহু মানুষের মুখে দুমুঠো খাবার জুটবে। চাইলে অতিধনীদের কোনো একজনের একবারের দানেই বিশ্বজুড়ে অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষ প্রাণে বাঁচবে।
মঙ্গলবার সিএনএনের কানেক্ট দ্য ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডেভিড বিসলি বলেন, ‘ধনকুবেরদের এখনই, একবারের জন্য হলেও এগিয়ে আসতে হবে।’ তিনি এ সময় মূলত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি টেসলার ইলন মাস্ক এবং দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী আমাজনের জেফ বেজোসের কথা বলেন।
ডেভিড বিসলি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগছে। তাদের সাহায্যে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। আমরা যদি সাহায্য নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছাতে না পারি, তাহলে যেকোনো সময় তারা মারা যেতে পারে।’ তাদের সাহায্যে এখনই ধনকুবেরদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সম্প্রতি এক লাখ কোটি মাইলফলক ছাড়িয়েছে ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা। ব্লুমবার্গের হিসাব অনুযায়ী, টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের সম্পদ এখন ২৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। অর্থাৎ তিনি তার সম্পদের মাত্র ২ শতাংশ দান করলেই মিটবে চরম এই খাদ্যসংকট।
বিশ্বজুড়ে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগছে। তাদের সাহায্যে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। আমরা যদি সাহায্য নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছাতে না পারি, তাহলে যেকোনো সময় তারা মারা যেতে পারে।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের শতকোটি ডলারের মালিকদের সম্পদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ অ্যান্ড আমেরিকানস ফর ট্যাক্স ফেয়ারনেস নামের একটি গোষ্ঠীর হিসাব অন্তত তা–ই বলছে। চলতি অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের অতিধনীদের মোট সম্পদের পরিমাণ পাঁচ লাখ কোটির বেশি।
ডব্লিউএফপির পরিচালক ডেভিড বিসলি বলেন, একসঙ্গে এখন অনেক সংকটের মুখে বিশ্ব। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে দেখা দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড মহামারি। এসব সংকটের কারণে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এর মানে হলো, একসঙ্গে অনেক দেশ দুর্ভিক্ষের দরজায় কড়া নাড়ছে।
গত সোমবার সোমবার প্রকাশিত ডব্লিউএফপির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে ২ কোটি ২৮ লাখ মানুষ চরম অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। দুই মাস আগেও দেশটিতে অনাহার পরিস্থিতিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখের মতো ছিল। এ সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
করোনাকালে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চলছে অর্থনৈতিক সংকট৷ স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে খাদ্যনিরাপত্তাও পড়েছে সংকটে৷ বাড়ছে ক্ষুধার্তের সংখ্যা৷
রেকর্ড বলছে, ২০২০ সাল আগের সব বছরের তুলনায় অনেক বেশি উষ্ণ ছিল৷ তবে বছরের সবচেয়ে বড় সংকট নিঃসন্দেহে করোনার প্রকোপ৷এ সময়ে বিশ্বের অনেক দেশেই খাদ্যনিরাপত্তা আরো সংকটে পড়েছে৷ বেড়েছে অপুষ্টিজনিত রোগ৷
খাদ্যসংকট ২০২০ সালের আগেও ছিল৷ ২০১৯ সালে বিশ্বে কমপক্ষে ৬৯ কোটি মানুষ ক্ষুধার জ্বালা সয়েছে৷ জাতিসংঘের ধারণা, ২০২০ সালে ক্ষুধায় কষ্ট পাওয়া মানুষের সংখ্যা ৮২ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা৷
২০২০ সালে প্রতি দশজনে একজন মানুষ অন্তত পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য পায়নি৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং সাব সাহারান আফ্রিকার যেসব অঞ্চলে পানির সংকট রয়েছে, কিংবা যেসব জায়গায় আঞ্চলিক সংঘাত চলছে, সেসব জায়গার মানুষ খাদ্যসংকটে বেশি ভুগেছে৷
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে একাধিক দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাষযোগ্য জমি সংরক্ষণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বনায়ন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো, বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্যস্ত হয়ে আছে বিশ্বের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫৮
আপনার মতামত জানানঃ