ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড ছাড়তে ইসরায়েলকে এক বছরের সময় দিলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। অন্যথায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৯৬৭ সালের সীমানা মানবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে আব্বাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষ্যম ও জাতিগত নির্মূলকরণেরও অভিযোগ আনেন। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে না সড়ে গেলে রাষ্ট্রের স্বীকৃতিও প্রত্যাহারের হুমকি দেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, এক বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলকে চলে যেতে হবে অন্যথায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভূমি দখলের বৈধতা প্রশ্নে ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে। অধিকৃত ফিলিস্তিনের রামাল্লাহ শহর থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘ অধিবেশনে তার ভাষণ তুলে ধরেন।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম শহর এবং গাজা উপত্যকায় যদি দখলদারিত্বের অবসান না হয় তাহলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৯৬৭ সালের সীমানা মানবে না। জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের চূড়ান্ত মর্যাদা দেওয়া নিয়ে যে সমস্যা চলছে তা সমাধানে কাজ করতে প্রস্তুত ফিলিস্তিনিরা।
এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অন্যদিকে অঞ্চলটির ৮০ শতাংশ মানুষ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের পদত্যাগ চেয়েছেন। প্যালেস্টিনাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভের এক নতুন জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পুলিশ কাস্টডিতে সম্প্রতি একজন অ্যাকটিভিস্ট নিহত হন। এছাড়া ফিলিস্তিনের মানুষ প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী দমন-পীড়ন করে। এসব কারণে আব্বাস প্রশাসনের ওপর মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে।
চলতি বছরের ২৪শে জুন রাতে ‘নিজার বানাত’ নামে এক অ্যাকটিভিস্টকে তার চাচাতো ভাইয়ের বাসা থেকে আটক করে ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। প্রায় এক ডজন ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তা ঘরে ঢুকেই বানাতের মাথায় লোহার শাবল দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। পরে কাস্টডিতে তার মৃত্যু হয়।
৪২ বছর বয়সী নিজার বানাত সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিলিস্তিনি দল ফাতাহর নেতাদের খোলাখুলি সমালোচনা করতেন এবং তার এই ব্যতিক্রমী ভূমিকার জন্য তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন। তিনি মাহমুদ আব্বাসের রাজনৈতিক দল ফাতাহর নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার এই সংক্রান্ত পোস্টগুলো হাজার হাজার মানুষ দেখতো।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে গড়ে ওঠে ইসরায়েল। দেশটির এই দখলদারি আজও অব্যাহত রয়েছে। বাধা দিলেই চলে নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে এই ইসরায়েলি নীতিই বাস্তবায়ন করে চলেছে মাহমুদ আব্বাসের সরকার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। শাসন-শোষণ, ধড়পাকড় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সবই করছে।
সংশ্লিষ্টরা ভেবেছিলেন, বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যনীতিতে পরিবর্তন আসবে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, আগের যেকোনো মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বাইডেনের নীতিগত কোনো প্রভেদ নেই। ফিলিস্তিনে হামলার সময় যে হারে বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বাইডেন মন্তব্য করার পাশাপাশি ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের সপক্ষে সাফাইও গেয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের এই ট্র্যাজিক নাটকের পুনরাভিনয় আমরা দেখে আসছি কয়েক দশক ধরে। পাত্রপাত্রীর সামান্য রদবদল হয়তো হয়, কিন্তু নায়ক-নায়িকা সবই অভিন্ন। এই অবস্থার হয়তো পরিবর্তন একদিন হবে, কিন্তু কবে ও কীভাবে, সে প্রশ্নের জবাব কোথাও নেই।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৯০৭
আপনার মতামত জানানঃ