পৃথিবীর সর্বত্র মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি ছড়িয়ে পড়েছে। সাগরের তলদেশ থেকে শুরু করে বরফে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকাও বাদ নেই। সর্বত্র ছড়িয়ে থাকার কারণে মানবদেহেও এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে সায়েন্স এলার্টের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের মলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি। গবেষণায় এক বছর বয়সী শিশুদের মলে উল্লেখযোগ্য হারে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়।
খাবারের মাধ্যমে মাইক্রোপ্লাস্টিক পেটে গেলে শরীরে কী ধরনের প্রভাব পড়ে, তা এখনও জানা যায়নি। তবে এর যে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই, তা আগের মতো বলা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সেল মেমব্রেন থেকে সংবহনতন্ত্রে প্রবেশ করতে পারে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এতে কোষের স্বাভাবিক ক্রিয়া পর্যন্ত ব্যাহত হতে পারে।
প্লাস্টিকের বাটিতে খাবার খাওয়ার কারণে বড় মানুষের মলেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে একই এলাকায় বসবাসরত প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে বলে জানা যায় সম্প্রতি নতুন এক প্রাথমিক গবেষণায়।
সায়েন্স এলার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে গড়ে এক বছর বয়সি ছয়টি শিশুর মলে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির চেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
গবেষণা অনুসন্ধানে বলা হয়, প্লাস্টিকের তৈরি চুষনি চোষা ও পাত্রে খাদ্যগ্রহণ, প্লাস্টিকের খেলনা মুখে দেয়ায় প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুরা প্লাস্টিকের সান্নিধ্যে বেশি আসে।
গবেষণাপত্রে গবেষকরা বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মলে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির শিশু বিশেষজ্ঞ কুরুনথাচালাম কান্নানের নেতৃত্বাধীন গবেষণা দলটি মানবদেহের সংস্পর্শে আসা দুই ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক মূল্যায়নে আগ্রহী ছিলেন।
এদের একটি পলিথিলিন টেরেফথালেট (পিইটি), যা খাবার প্যাকেটজাত ও পোশাক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। অন্যটি খেলনা ও বোতলে ব্যবহৃত পলিকার্বনেট (পিসি)।
এক বছর বয়সি ছয়টি শিশু ও ১০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মলের নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। পাশাপাশি তিনটি নবজাতকের কালো রঙের প্রথম মলের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি মলের নমুনায় কমপক্ষে এক ধরনের প্লাস্টিক পাওয়া যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ও এক বছর বয়সি শিশুদের মলের মধ্যকার পার্থক্য লক্ষণীয় ছিল।
গবেষকরা বলেন, ‘অনুসন্ধানে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মলে দুই ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্যাটার্নের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আমাদের নজরে পড়ে। প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের মলে পলিথিলিন টেরেফথালেট উল্লেখযোগ্য হারে বেশি ছিল।’
‘অবশ্য তাদের মলে পলিকার্বনেট মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য ছিল না।’
গবেষকরা আরও জানান, প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে এক বছর বয়সি শিশুদের মলে পলিথিলিন টেরেফথালেটের উপস্থিতি গড়ে ১০ গুণের বেশি ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি শরীরের জন্য ক্ষতিকর কি না তা দ্রুত পরীক্ষা করে দেখা জরুরি। এর ক্ষতিকর দিক পরীক্ষিত হলে, মাইক্রোপ্লাস্টিক কোন কোন উপায়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করছে বা চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ে তা বর্জন করা উচিৎ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০২
আপনার মতামত জানানঃ