টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীর বিরুদ্ধে সাংবাদিক রশিদ আহাম্মদ আব্বাসীকে (৫৫) অপরহণ ও খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীসহ আরও ৬ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) কালিহাতী উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি রশিদ আহাম্মদ আব্বাসী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পরে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নুশরাত জাহান মামলাটি তদন্তের জন্য কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন— উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাগবাড়ী ইউনিয়নের পাকুটিয়া গ্রামের মো. আব্দুল মজিদ তোতা (৬৫), মো. দুলাল হোসেন (৫০), আউলিয়াবাদ গ্রামের মো. ফজলুল হক (২৪), মো. আব্দুল কাদের (৫৫), বাংড়া গ্রামের প্লাবন (২৫) ও ধুবুলিয়া পাথালিয়া গ্রামের মো. শাহ জালাল ওরফে জামাল (৪০)।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ২৫ অগাস্ট সকালে সাংসদ হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী সাংবাদিক রশিদ আব্বাসীকে ফোন করে বাসায় (এমপির বাসা) যেতে বলেন। পরে রশিদ ওই বাসায় গেলে এমপি রশিদ আব্বাসীকে ‘খুন করে লাশ গুম’ করার হুকুম দেন তার লোকজনকে।
অভিযোগে বলা হয়, এ সময় আসামিরা তাকে এমপির বাসা থেকে তুলে নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। এ সময় তারা ওই সাংবাদিককে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন।
তা না হলে তাকেসহ তার পরিবারকে হত্যা করে লাশ গুম করা হবে বলে হুমকি দিয়ে আসামিরা এমপির বাসার ভেতরে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগে বলা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ওই সময় রশিদ আব্বাসী সেখান থেকে চলে গেলেও দুপুরে আবার তার বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন এবং হুমকি দেন আসামিরা।
সাংবাদিক রশিদ আহাম্মদ আব্বাসী বলেন, ‘এমপি হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী ফোন করে আমাকে ডেকে নেন। পরে তার বাসায় গেলে সাঙ্গপাঙ্গদের হুকুম দেন, আমাকে হত্যা করে লাশ গুমের। এক পর্যায়ে আমাকে বাসা থেকে বের করে রাস্তা দিয়ে নেওয়ার সময় চিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসতে আমাকে রেখে চলে যায় তারা। এ ঘটনায় আমি ওইদিন কালিহাতী থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ আমার অভিযোগটি আমলে নেয়নি। পরদিন ২৬ জুলাই আমি পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর লিখিত আবেদন করি। এরপর ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ, আইজিপি পুলিশ সদরদফতর ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন দিই। আবেদনগুলোর বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হয়ে যায়। এরপর বাধ্য হয়েই আমি আদালতের শরণাপন্ন হই।’
এ ঘটনায় আমি ওইদিন কালিহাতী থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ আমার অভিযোগটি আমলে নেয়নি। পরদিন ২৬ জুলাই আমি পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর লিখিত আবেদন করি। এরপর ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ, আইজিপি পুলিশ সদরদফতর ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন দিই। আবেদনগুলোর বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হয়ে যায়। এরপর বাধ্য হয়েই আমি আদালতের শরণাপন্ন হই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সাংবাদিক। বিভিন্ন সময় অনেকের বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশ হয়। হয় তো কোনও নিউজের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে।’
এ ব্যাপারে এমপি হাসান ইমান খান সোহেল হাজারী বলেন, “তথাকথিত এক সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলে আমি শুনেছি। তার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। একটি মহল আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। ওই লোকের এলাকভিত্তিক সমস্যা। যেহেতু মামলা হয়েছে আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি তাই আইনি প্রক্রিয়াতেই আমি এর সত্য জবাব দিতে চাই।”
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কখনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, কখনোবা প্রশাসন এসবের পেছনে থাকে। কিন্তু এগুলোর বিচার না হওয়ায় দেশে এমন নিপীড়নের ঘটনা ঘটতেই থাকে।
তারা বলেন, এ দেশে মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। সাংবাদিকদের জীবনও নিরাপত্তাহীন। কাজ করতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হতে হয় তাদের। স্বাধীন দেশে এটা মেনে নেওয়া যায় না। সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা এ দেশে নেই। একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু বিচার হয় না। এভাবে চলতে পারে না।
তারা বলেন, সরকারের কাছে বলতে বলতে সাংবাদিকেরা ক্লান্ত। দেশের প্রতিটি বিভাগে, থানায় সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। সাংবাদিকদের কলম ভেঙে দেওয়া সহজ নয়। খুন, গুম, নির্যাতনের শিকার হওয়া সাংবাদিকদের ঘটনার বিচার করতে হবে।
তারা বলেন, রক্তের দাগ শুকিয়ে যাবে, কবরে ঘাস গজাবে, মানুষও সাংবাদিকতা পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত মানুষদের ভুলে যাবে। যদি সংবাদপত্রের কাগজগুলো সাদাই থাকত, টেলিভিশনের পর্দা দিনরাত ঝিরঝির করত আর অনলাইন পোর্টালগুলোতে লেখা থাকত ‘৪০৪ সিস্টেম এরর’—তাহলে হয়তো সাংবাদিকতার জরুরত মালুম হতো অনেকের। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনকে তখন এতটা ‘স্বাভাবিক’ মনে হতো না। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশে সে উপায়ও নেই গণমাধ্যমের। একদল সাংবাদিক তবু পেশাগত পবিত্রতা মাথায় নিয়ে পবিত্র প্রাণীর মতো অপঘাতের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যান। পরাজয় জেনেও যিনি লড়াই করে যান, তাকেই বলে সংশপ্তক। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা এখন সংশপ্তক পর্ব পার করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৬
আপনার মতামত জানানঃ