এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে এমন নজির অহরহ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা আরও বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। কোনো সমস্যার কারণে ঋণ পরিশোধ করতে সামান্য দেরি হলেই অমানবিক আচরণ করে কিস্তি আদায় করে এনজিওগুলো। এগুলো নিয়ে সরকারি তদারকির জায়গায় ফাঁক থেকে যাওযার কারণে এনজিওগুলো এমন কাজ অব্যাহত রাখার সুযোগ পাচ্ছে।
স্বামী নুরুল আমীনের কাপড়ের দোকানের ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য স্ত্রী শাহনাজ পারভিন স্থানীয় টিএমএস নামের একটি এনজিও থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেছিলেন ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে। তারা গাজীপুর শ্রীপুরের বাসিন্দা। প্রতিমাসে ৯৫০০ টাকা করে কিস্তিও পরিশোধ করতেন নিয়মিত। একসময় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় ২টি কিস্তি দিতে পারছিলেন না। পরে এনজিও কর্মীর পীড়াপিঁড়িতে দু’মাস পরই তা পরিশোধ করে ঋণ পরিশোধের সনদও নেন শাহনাজ পারভীন।
২০১৭ সালে ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ করার পরও এনজিওর মামলা করেছে শাহনাজ পারভীনের নামে। গতকাল(২৬ জুলাই) সোমবার বিকেলে ছ’মাসের দুগ্ধজাত শিশু রেখে পরোয়ানা মূলে শাহনাজ পারভীনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায শ্রীপুর থানা পুলিশ।
শিশুটির বাবা নুরুল আমীন বলেন, আমরা ঋণ গ্রহণ করার পরে ২টি কিস্তি পরিশোধ করতে কিছুটা সময় লাগে। ২ মাস পরই ঋণের সব টাকা পরিশোধ করি। এসময় এনজিও আমাদের ঋণ পরিশোধের প্রত্যয়নও দেয়। যদিও পরে তারা আমার স্ত্রীর নামে মামলা করেন। এ মামলার বিষয়ে আমরা কেউ কিছু জানতাম না। হঠাৎ করে শ্রীপুর থানা পুলিশ গিয়ে আমার স্ত্রীকে আটক করে নিয়ে আসে।
তিনি আরো বলেন, সমস্যা হয়েছে আমার ছ’মাসের শিশু ফাতেমার জন্য। সে এখনও তার মায়ের দুধ ছাড়া কিছুই খায় না। বিকেল থেকেই তার মায়ের জন্য সে কান্নাকাটি করছে। করোনার এই মহামারীর সময় এমন অমানবিকতায় পড়বো তা ভাবতেই পারছি না।
এ বিষয় নিয়ে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক অপারেশন গোলাম সারোয়ার বলেন, এনজিওর মামলায় আদালতের পরোয়ানা মূলে এই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগামীকাল তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
টিএমএস শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম বলেন, শাহনাজ পারভীন নামের বর্তমানে আমাদের কোন সদস্য নেই, তবে পূর্বে ছিল। তার কাছে আমাদের কোন দেনা পাওনা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে কেন মামলা হলো তা তিনি বলতে পারবেন না। তার পূর্বে যে দায়িত্বে ছিল বিষয়টি তার জানা থাকতে পারে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, এনজিও ঋনের টাকা পরিশোধের পরও মামলা ও শিশু রেখে একজন নারীকে আটক সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
এর আগেও টিএমএস এনজিও অমানবিক আচরণ করে ভোগান্তিতে ফেলেছে ঋণগ্রহীতাদের। এইবছরই যশোরের বেনাপোলে করোনাকালীন নিষেধ অমান্য করে জোরপূর্বক সমিতির কিস্তি আদায় করার সময় পরিতোষ মন্ডল নামের একজন এনজিও কর্মীকে পুলিশে সোপর্দও করা হয়েছিলো। পরে কিস্তির টাকা আর আদায় করবে না মুচলেকায় মুক্তি পেয়েছে ওই কর্মী।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮৩৮
আপনার মতামত জানানঃ