বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, কয়েকটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের বিতরণ করা মোট ঋণের ৮৭ শতাংশ নিয়েছেন একজন গ্রাহক। দুঃখের বিষয় ঋণের এ অর্থগুলো এখন দেশে নেই, পাচার হয়ে বিদেশে চলে গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শেরাটন হোটেলে ‘ড্রাইভিং চ্যালেঞ্জ: আনলকিং দ্য পটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল মার্কেট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন গভর্নর মনসুর। অনুষ্ঠান আয়োজন করে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড।
গভর্নর বলেন, গত ১৫ বছরে দেশ থেকে বিপুল অর্থ ব্যাংকিং সিস্টেমের মধ্যদিয়ে বিদেশে পাচার হয়েছে। এগুলো খুবই সুপরিকল্পিতভাবে নেয়া হয়েছে যেটা আমাদের সবার জন্য বেদনাদায়ক। ইসলামী ধারার কয়েকটি ব্যাংকের ৮৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছে একজন গ্রাহক। দুঃখের বিষয় ঋণের অর্থগুলো এখন দেশে নেই, বিদেশে চলে গেছে। এ অর্থ ফেরত আনা কঠিন। ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া তৈরি করেছি; যার মাধ্যমে ঋণ ও পাচারের অর্থ-সম্পদ রিকভারি বা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।
দেশের বেশ কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, আগামী জানুয়ারি থেকে ব্যাংক টু ব্যাংক তাদের সম্পদ পর্যালোচনা শুরু করা হবে। আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে গভর্নর বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোর সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারা অর্থ নিয়ে গেছে সেটা বের হয়ে আসবে। ইউরোপ-আমেরিকার রাজনৈতিক সাহায্য নেয়া হবে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে।
মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে জানিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আসছে জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামবে। আর আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য যে সমস্ত নীতি দরকার তার সবগুলো প্রয়োগ করা হচ্ছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে মূল্যস্ফীতিতে উন্নতির লক্ষণ না দেখা দিলে, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা হবে বলে জানান আহসান এইচ মনসুর।
গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ ছাড়াই বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ হচ্ছে ও এখন বাজার স্থিতিশীল আছে। এখন এলসি খুলতে কোনো জটিলতা নেই উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, গত চার মাসে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
দু’টি পর্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদ মোশতাক হোসেন খান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, এশিয়ান টাইগারের চেয়ারম্যান ইফতি ইসলাম, দ্য টাইম ট্রাভেলিং ইকোনমিস্টের লেখক চার্লস রবার্টসন, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, ডিএসই ব্রোকারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুর রহমান।
আপনার মতামত জানানঃ