সোমালিয়ার আধা স্বায়ত্তশাসিত পান্থল্যান্ড অঞ্চলে ২১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল-শাবাবের সদস্য প্রমাণিত হওয়ায় এই দণ্ড পেয়েছে তারা। গালকায়ো এলাকার একটি সামরিক আদালতে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ফায়ারিং স্কোয়াডে দণ্ড কার্যকর হয়েছে তাদের। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, অভিযুক্ত ২১ জনের মধ্যে ১৮ জন গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সোমালিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গুপ্তহত্যাসহ বোমা হামলা চালিয়ে এসেছে।
এদিকে নিজেদের যোদ্ধাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনে জঙ্গিগোষ্ঠী আল শাবাব সোমালিয়ার অন্য একটি শহরে হামলা চালিয়েছে এবং সরকারি সেনাদের হত্যা করেছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এর আগেও আদালতের মাধ্যমে সোমালিয়ার বিভিন্ন অংশে আল-শাবাব জঙ্গিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটেছে। তবে একসঙ্গে এতোসংখ্যক অভিযুক্ত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা এবারই প্রথম।
অবশ্য আল-শাবাব জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকলে বা তাদের চালানো হামলায় কোনো সাধারণ মানুষ সহযোগিতা করলে সবাইকেই বিচারের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছে পুন্টল্যান্ড কর্তৃপক্ষ।
বিবিসি আফ্রিকার’র সম্পাদক উইল রস বলছেন, এতোসংখ্যক সদস্যের একসঙ্গে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও জঙ্গিগোষ্ঠীটি সোমালিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য এখনও বড় ধরনের হুমকি।
সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় ও মধ্যাঞ্চলীয় বিস্তৃত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মূলত আল শাবাব। এছাড়া হিরাল ইনস্টিটিউট থেকে গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, সোমালিয়ার সরকারের তুলনায় জঙ্গিদের সংগৃহীত টাকার পরিমাণ বেশি।
এর আগে ২৩জুন আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ায় এক সেনা অভিযানে জঙ্গিগোষ্ঠী আল শাবাবের ১৮৯ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোমালিয়া সরকারের সহযোগী উগান্ডার সেনাবাহিনী।
রাজধানী মোগাদিসুর কাছে তিনটি গ্রামে আল শাবাবের প্রশিক্ষণ শিবিরে উগান্ডার সেনবাহিনী উগান্ডান পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (ইউপিডিএফ) অভিযান পরিচালনা করে। সেই অভিযানেই এরা নিহত হন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউপিডিএফ।
বিগত কয়েক বছর ধরেই আফ্রিকাভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল শাবাব অপহরণ, হত্যা, বোমা হামলাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে সোমালিয়ায়। সম্প্রতি দেশটির পূর্ণ ক্ষমতার দখল নিতে সেখানকার নির্বাচিত সরকার পতনের লক্ষ্যে কাজ করছে আল শাবাব।
এ পরিস্থিতিতে এই সন্ত্রাসী সংগঠনকে দমনের মাধ্যমে দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোমালিয়ার ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ)। এইউ এর সহযোগী হিসেবে সেখানে কাজ করছেন উগান্ডার সেনাসদস্যরা।
বিবৃতিতে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলৈা, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুর ৬২ মাইল দক্ষিণপশ্চিমে সিগালে, আদিমোলে এবং কাইতোয়ে গ্রামে আল শাবাবের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে শুক্রবার অভিযান চালানো হয়।
এ বিষয়ে আরো বলা হয়,‘ ইউপিডিএফের অভিযানে ১৮৯ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। এছাড়া ওই তিন গ্রামে অভিযানের সময় তাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে যেসব অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক পাওয়া গেছে, সেগুলো জব্দ করা হয়েছে।’
তবে আল শাবাব গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এখনো এ হামলার কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
সোমালিয়ায় কট্টর ইসলামী শরিয়াপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী আল শাবাবের উত্থান ২০১১ সালে। ইতোমধ্যে দেশটির দক্ষিণাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া আল শাবাব গত দু’তিন বছর ধরে দেশটির কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। তাদের প্রতিহত করতেই সোমালিয়া সরকারকে সহযোগিতা করছে আফ্রিকান ইউনিয়ন।
সম্প্রতি সোমালিয়ার সেনাবাহিনী ও এইউ বাহিনীর টানা অভিযানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু এলাকা হাতছাড়া হয়ে গেলেও আল শাবাবের অস্ত্র ও গোলাবারুদের ভান্ডার এখনও বেশ সমৃদ্ধ বলে জানিয়েছেন দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩৯
আপনার মতামত জানানঃ