ব্রিটিশ সরকার পশ্চিম জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েলের একচ্ছত্র কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে তবে পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলিদের অধিকৃত হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে। জেরুজালেম শহরটি কিছু ধর্মের কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য-ইসরায়েলের দ্বিনাগরিকত্ব সম্পন্ন এক নারীর নতুন পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে জেরুজালেমের জায়গায় ‘দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল’ লিখেছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ইসরায়েলিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
গতকাল বুধবার (১৬ জুন) ইসরায়েলি দৈনিক হারেজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম কানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আয়েলেৎ বালাবান নামে এক ইহুদি নারী জানান, তার নতুন পাসপোর্টে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জেরুজালেমকে ‘দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল’ উল্লেখ করেছে, যা দেখে তিনি রীতিমতো হতবাক হয়ে যান।
আয়েলেৎ বলেন, আমি ভেবেছিলাম তারা হয়তো দ্বিধায় পড়েছে। কারণ আমি গাজা থেকে উদ্বাস্তু ইহুদিদের একটি মোশাবে (সম্প্রদায়) থাকি, যদিও সেটি আমার জন্মস্থান নয়।
এ নারী জানান, দুই বছর আগে তার ভাইয়ের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছিল। সেখানে ঠিকই জন্মস্থান হিসেবে জেরুজালেম লেখা হয়েছে।
অর্থাৎ, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাদের ইসরায়েল-নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনলে সেটি অতিসম্প্রতিই আনা হয়েছে।
আয়েলেৎ জানান, তিনি এ বিষয়ে জানতে লন্ডনে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাননি।
এদিকে, জেরুজালেমে অবস্থিত ব্রিটিশ কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটে বলা রয়েছে, জেরুজালেমের ওপর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে যুক্তরাজ্য। দেশটি পশ্চিম জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েলের একচ্ছত্র কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দিলেও পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলিদের দখলকৃত হিসেবে বিবেচনা করে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কান কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, পাসপোর্টের ওই ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে। আর ইসরায়েলে ব্রিটিশ দূতাবাসে যোগাযোগ করলে তারা এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি।
এদিকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হটিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের নেতৃত্বে ইসরায়েলে নতুন সরকার গঠনের দুই দিনের মাথায় আবারও গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত মাসে গাজায় টানা ১১ দিন বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটে। তবে ওই চুক্তির পর তিন সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবার এই হামলার ঘটনা ওই অঞ্চলে শান্তি আশা ফিকে হয়েছে।
বিবিসি, আল–জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নতুন করে এই উত্তেজনার শুরু মঙ্গলবার ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের জেরুজালেম দিবসের ‘ফ্ল্যাগ মার্চকে’ কেন্দ্র করে।
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরায়েলের পূর্ব জেরুজালেম দখলের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রতিবছর জেরুজালেম দিবস ফ্ল্যাগ মার্চ করেন ইহুদিরা। তাদের এই শোভাযাত্রাকে উসকানি হিসেবে দেখেন ফিলিস্তিনিরা।
এই শোভাযাত্রা উপলক্ষে মঙ্গলবার জেরুজালেমের দামেস্ক গেটের সামনে জড়ো হন কয়েকশ ইসরায়েলি জাতীয়তাবাদী। তাদের অধিকাংশই ছিলেন তরুণ। তারা নাচ, গান ও ইসরায়েলি পতাকা উড়িয়ে উৎসব করেন। পরে ইহুদিদের অন্যতম পবিত্র স্থান ওয়েস্টার্ন ওয়ালে পৌঁছানোর জন্য আরেকটি ফটক দিয়ে ঢোকেন তারা।
এই শোভাযাত্রার জন্য রাস্তা খালি করতে ইসরায়েলি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সহিংস আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, এ সময় ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৩৩ জন ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ স্টান গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
জেরুজালেমের এমন সংকট মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের এই ঘটনা ইসরায়েলিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ