প্রথম বারের মতো ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের প্রধান একটি দল ইসরায়েলের নবগঠিত জোট সরকারে যোগ দিচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে জোট হওয়া আট দলে যুক্ত হচ্ছে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড আরব লিস্ট। এই নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কারণ এর আগে এমন কোনো জোট করার ঘটনা দেখেনি বিশ্ব।খবর আল জাজিরা
ইউএএল-এর প্রধান মানসুর আব্বাব ৮ দলের জোট সরকার গঠনে স্বাক্ষর করেন। ইয়েশ আটিড পার্টির প্রধান ইয়ার লাপিড ও ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেটের সঙ্গে নিজেদের মতবিরোধ পেছনে রেখে জোটে যোগ দিচ্ছে দলটি। জোট সরকার গঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর দীর্ঘ ১২ বছরের শাসনকালের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
এদিকে জোটবদ্ধ হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন ইসলামি আন্দোলনের দক্ষিণ শাখার রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড আরব লিস্টের (রাম) প্রধান মনসুর আব্বাস।
তিনি বলেন, এই জোট নতুন সরকার গঠন করলে ফিলিস্তিনে সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়িতে আর কোনো হামলা হবে না। দখল করা হবে না কোনো ভূমি।
এছাড়াও আব্বাসের দাবি, ইসরায়েলের বেদুইন শহরে তার দলের শক্ত অবস্থান রয়েছে। জনসমর্থনই তাকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ইসরায়েলের রাজনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তারা জোটে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মনসুর আব্বাস।
আব্বাস বলেন, তার দলের এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। কারণ ইসরায়েলে বসবাসরত মোট ৯০ লাখ নাগরিকের মধ্যে ২০ ভাগ ফিলিস্তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দেশে রাজনৈতিক দলের ভারসাম্য পরিবর্তনের জন্য জোট সরকারে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
প্রথমবারের মতো এবারই ইসরায়েল সরকারের অংশ হতে যাচ্ছে একটি ইসলামী দল। ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ আরব। এর আগে তাদের ভোটেই সংসদে গেছে ইউনাইটেড আরব লিস্ট নামের এই দলটি।
দলটির নেতা মনসুর আব্বাস বলেন, বিরোধীদের মধ্যে সরকার গঠনের যে চুক্তি হয়েছে তার আওতায় ইসরায়েলের আরব অধ্যুষিত শহরগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সেখানকার সহিংসতা কমানোর জন্য এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে।
যদিও পশ্চিম তীর ও গাজায় মনসুর আব্বাস ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তিনি শত্রুর পক্ষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনিরা। অনেকে তাকে বিশ্বাসঘাতকও বলছেন।
ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আইনজীবী ডায়না বাট আল জাজিরাকে বলেন, আব্বাসের এমন সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনিদের কোনো উপকারেই আসবে না। বরং ইসরায়েলের স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করে যাবেন আব্বাস। এছাড়াও জোটের অংশ হিসেবে আব্বাস এবং তার জোট ইসরায়েলের স্বার্থেই কাজ করবে।
ডায়না বাট আরও বলেন, আব্বাস ওই জোটের ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র। তাই জোটের বাইরে গিয়ে আব্বাসের দ্বারা কিছুই করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া জোটে অংশগ্রহণ একজন আরবের আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত।
ইসরায়েলে আরবদের নিয়ে কাজ করা মোসাওয়া সেন্টারের পরিচালক জাফর ফারাহ মনে করেন, ইউনাইটেড আরব লিস্টের এমন জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি হাস্যকর এবং নির্বোধের মতো বিষয়। ওই জোটে আরবদের যোগ হওয়া ইহুদিবাদকে প্রোমোট করে।
মানসুর আব্বাস (৪৭) ইসরায়েলের ইসলামি মুভমেন্টের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে দক্ষিণাঞ্চলীয় শাখাটি শেখ রায়েদ সালাহ নেতৃত্বাধীন উত্তরাঞ্চলীয় ইসলামিক মুভমেন্ট শাখা থেকে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
জোটের চুক্তি অনুসারে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী দল ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেট প্রথম দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। পরের দুই বছর লাপিড প্রধানমন্ত্রী হবেন। নতুন এই সরকারের শপথ নেওয়ার আগে সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যাচাইয়ে দেশটির পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। জোট যদি ১২০ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়, তাহলে নতুন করে নির্বাচন হবে।
উল্লেখ্য, ইউএএল ইসরায়েলের আরব রাজনৈতিক দলের একটি জোট। ১৯৯৬ সালে ইসরায়েলের নেসেট নির্বাচনে ইসলামিক মুভমেন্টের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের পর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ৪৮ টি আরব রাজনৈতিক দল রয়েছে।
৫৪ বছরে ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল
শনিবার কমিশন অন ডিটেইনিজ অ্যান্ড এক্স ডিটেইনিজ অ্যাফেয়ার্স নামক একটি ফিলিস্তিনি এনজিও-র এক বিবৃতিতে জানায়, ১৯৬৭ সালের আরব ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার নারী এবং ৫০ হাজার শিশুও রয়েছে। খবর ইয়েনি সাফাক।
সংস্থাটি বলছে, ১৯৬৭ সাল থেকে ৫৪ হাজারেরও বেশি প্রশাসনিক আটকের আদেশ রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে ইসরায়েলের কারাপ্রকোষ্ঠে মৃত্যু হয়েছে ২২৬ জনের। প্রশাসনিক আটকাদেশের নীতি অনুযায়ী, বিনা অভিযোগে বা কোনও বিচার ছাড়াই বন্দিদের আটকাদেশের সময়সীমা বাড়ানোর অনুমতি দেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
কারান্তরীণ হওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যেকেরই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর আচরণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কারাবন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইসরায়েলের কারাগারগুলোতে আনুমানিক সাড়ে চার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে ৪১ জন নারী, ১৪০টি শিশু এবং ৪৪০ জন প্রশাসনিক বন্দি রয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম, সিরিয়ার গোলান মালভূমি এবং মিসরের সিনাই উপত্যকা দখল করে নেয় ইসরায়েল। পরে ১৯৭৯ সালের এক চুক্তির আওতায় সিনাই উপত্যকা মিসরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে বাদবাকি এলাকাগুলোতে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব বজায় থাকে। এরপরও কিছু দিন পরপরই ফিলিস্তিনি এলাকায় নতুন নতুন অবৈধ বসতি স্থাপনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সেগুলোর দখল নিচ্ছে ইসরায়েল। দখলদারিত্বের পাশাপাশি ইসরায়েলি জেল-জুলুম ও হত্যাকাণ্ডও ফিলিস্তিনিদের জন্য যেন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৩১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ