জেলা শহরের শিক্ষাবোর্ড সড়কের ঈশ্বর পাঠশালায় অবস্থিত রামমালা গ্রন্থাগারটি একটি দুর্লভ প্রাচীন হাতে লেখা পান্ডুলিপির সংগ্রহশালা। এটি দেশের প্রাচীন সংগ্রহশালা। গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে পুঁথি, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির নানা নিদর্শন। যা অধিকাংশ মানুষের অগোচরে থেকেই কালের সাক্ষী হয়ে শতবর্ষ পার করেছে।
কুমিল্লার এই রামমালা গ্রন্থাগারে বিভিন্ন ধরণের ৩০ হাজার বই ও আট হাজার প্রাচীন পুঁথি রয়েছে। পুঁথিগুলো সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় লেখা। সংস্কৃত ভাষায় পুঁথির সংখ্যা ছয় হাজারেরও বেশি। এছাড়া পান্ডুলিপিগুলো তালপাতা, কলাপাতা, তুলট কাগজ ও কাঠসহ নানা উপাদানের ওপর লেখা। ইউএনবি।
গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য। তার মাতা রামমালা দেবী স্মরণে ১৯১২ সালে কুমিল্লা শহরের উপকন্ঠ শাকতলায় নিজ বাড়ির বৈঠকখানায় তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেসময় ঈশ্বর পাঠশালার অন্যতম পন্ডিত সূর্যকুমার স্মৃতিতীর্থ গ্রন্থাগারটি পরিচালনা করতেন।
সংস্কৃত ভাষায় লেখা বেশিরভাগ শাস্ত্রগ্রন্থ সাধারণ পাঠকের বোধগম্য হয়নি বিধায় গ্রন্থাগারে কিছু কিছু বাংলা পুস্তক, প্রবাসী, ভারতবর্ষ মাসিক পত্রিকা রাখা হতো। ধীরে ধীরে গ্রন্থাগারে হাতে লেখা প্রাচীন পুঁথিও সংগৃহীত হতে থাকে।
১৯৫০ সালে শিক্ষাবোর্ডের সামনে মহেশাঙ্গনে রামমালা গ্রন্থাগারটি স্থানান্তর করা হয়। রামমালা গ্রন্থাগারে বর্তমানে তিনটি বিভাগ রয়েছে। গবেষণা, পুঁথি ও সাধারণ। গবেষণা বিভাগে ভারতীয়, সংস্কৃতি, বেদ, ধর্মসহ বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম সংরক্ষিত আছে। সাধারণ বিভাগে রয়েছে দেশি-বিদেশি পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন গ্রন্থ। সকাল থেকে দুপুর ও বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাধারণ বিভাগ সকল পাঠকের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
পুঁথি বিভাগে হাতে লেখা প্রাচীন সংস্কৃত ও বাংলা পুঁথি সংরক্ষিত রয়েছে। যার সংখ্যা প্রায় আট হাজার। তারমধ্যে দুই হাজার তালপাতায় লেখা। বাকিগুলো কাঠ, কলাপাতা ও এক ধরণের কাগজে লেখা। পুঁথি বিভাগে ৩০০ থেকে ৪০০ বছর আগের সংস্কৃত ভাষার পুঁথিও রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব পুঁথি সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ২৭ জন ব্যক্তি এ গ্রন্থাগারে পুঁথি দান করেছেন। তাদের নামও রয়েছে গ্রন্থাগারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এক চুক্তিতে রামমালা পুঁথি বিভাগের আড়াই হাজার পুঁথি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোফিল্ম করে রাখা আছে। দেশ-বিদেশের বহু গবেষক রামমালা পুঁথি বিভাগে আসেন গবেষণার জন্য। বর্তমানে এখানে গবেষণার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়।
রামমালা গ্রন্থাগার বর্তমানে মহেশ চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। গ্রন্থাগারের সহকারি গ্রন্থাগারিক ইন্দ্র কুমার সিংহের এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। রামমালা গ্রন্থাগারের প্রাক্তন গ্রন্থাগার পন্ডিত প্রবর রাসমোহন চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ শিষ্য ঈশ্বর পাঠশালার সাবেক শিক্ষক ইন্দ্র কুমার সিংহ টানা ২৫ বছর সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে থেকে ৯০ বছর বয়সে এসেও দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন লোকজন রামমালা গ্রন্থাগার দেখতে এসে ইন্দ্র কুমার সিংহের শরনাপন্ন হয়ে এ প্রতিষ্ঠানের অনেক অজানা কথাও জেনে নেন তার কাছ থেকে। পর্যটক বা গবেষকদের কাছে কুমিল্লার রামমালা গ্রন্থাগার এ উপমহাদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারক বাহক।
গ্রন্থাগারিক ইন্দুকুমার সিংহ জানান, পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মের বই এখানে রয়েছে। কুমিল্লার রামমালা গ্রন্থাগারে বিভিন্ন ধরণের ৩০ হাজার বই ও আট হাজার প্রাচীন পুঁথি রয়েছে। পুঁথিগুলো সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় লেখা। সংস্কৃত ভাষায় পুঁথির সংখ্যা ছয় হাজারেরও বেশি। এছাড়া পান্ডুলিপিগুলো তালপাতা, কলাপাতা, তুলট কাগজ ও কাঠসহ নানা উপাদানের ওপর লেখা বলে তিনি জানান।
আপনার মতামত জানানঃ