দেশের আদালতকে সরকার কসাইখানায় পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে তারানা হালিমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা খারিজের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দুপুরে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, এই সরকারের আমলে এই মামলা ওরা কখনোই এটা টিকতে দেবে না। কারণ কোর্ট তাদের, আদালত তাদের। এই আদালতগুলোকে তারা (সরকার) কসাইখনায় পরিণত করেছেন বিরোধী দলকে দমন করার জন্য, শাস্তি দেয়ার জন্য। এই সরকার ডিক্টেটর নয়, নাৎসিবাদের পর্যায় চলে গেছে। ডিক্টরের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাকে পতন করা যায় কিন্তু নাৎসিবাদকে পতন করতে হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো একটা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছেÑ এ রকম একটি বিষয়ের প্রয়োজন হয়। ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদÑ এদেরকে ঠেকাতে গিয়ে কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল। মামলাটি দায়েরের জন্য ছড়াকার আবু সালেহকে ‘সাংস্কৃতিক বীর’ বলে অভিহিত করেন রিজভী।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ইতিহাস বিকৃতি করে ‘ইনডেমনিটি’ নাটক নির্মাণ করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ছড়াকার আবু সালেহর দায়ের করা মামলা গত মঙ্গলবার ঢাকার দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মো: আশিকুজ্জামান খারিজ করে দেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের উদ্যোগে জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে নিয়ে মিথ্যা কুৎসারটনার জন্য নির্মিত নাটক ‘ইনডেমনিটি’ গণমাধ্যমে প্রচারের প্রতিবাদে এই মানববন্ধন হয়।
রিজভী আরো বলেন, এই সরকারের সাথে জনগণ নেই। দুই পায়ের ওপর নির্ভর করে আছে তারা। একটা হচ্ছে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী আরেকটা হচ্ছে, তাদের সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক সংগ্রামের ওই পরজীবীদের যদি আমরা প্রতিহত করতে না পারি দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে না, স্বাধীনতা থাকবে না। এখন বলা হয় প্রয়াণ দিবস। আমরা ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি মৃত্যু দিবস। আমরা এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কেউ মারা গেলে তাকে মরহুম বলে। এখন প্রয়াত বলা হয়। এটা খুব সুক্ষ্মভাবে এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনগুলো বিস্তার লাভ করাচ্ছে। কার স্বার্থে করছে তা নিশ্চয় জানেন? কোন সংস্কৃতিকে অঙ্গীভূত করার জন্য এই সরকার এবং তাদের অনুগত সংস্কৃতিজীবীরা কলাম লেখকরা এই কাজটি করছে সেটা আপনারা স্পষ্টভাবে জানতে চান। ওরা আমাদের দীর্ঘ দিনেরে যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এটাকে ধ্বংস করে, অন্য কোনো দেশের সাংস্কৃতিক অনুসঙ্গ বানাতে চান, এর অঙ্গীভূত বানাতে চান। সেই কারণে আজকে তারা এই কাজগুলো করছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, পেঁয়াজ ধরা থযাবে না, লবণ ধরা যাবে না, তেল, চাল, ডাল প্রত্যেকটা জিনিসের দাম এত বেড়েছে যে, মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এখন এখান থেকে নজর সরাতে হলে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কিছু খিস্তিখেউর করতে হয়। জিয়াউর রহমানের কোনো অপরাধ হতো না যদি মাত্র সাড়ে তিন বছরের পরিচর্চার মধ্য দিয়ে বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় দল তিনি প্রতিষ্ঠা না করে যেতেন। তাহলে এই জিয়াউর রহমানকে আওয়ামী লীগ বীরউত্তম বলত, এই জিয়াউর রহমানকে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ঘোষক বলত, এই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা বলত, এই তারেক রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষকের পুত্র বলত। কিন্তু সেটা বলতে পারছে না। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী তো বিএনপি।
যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, হিমালয় পর্বতের সামনে দাঁড়িয়ে তার উচ্চতা তার বিশালত্বকে হিংসা করে যদি কেউ হিমালয় পর্বতকে গালি দেয়, তাতে হিমালয় পর্বতের কিছুই যায় আসে না। সেক্সপিয়ারকে নিয়ে, তার নাটক নিয়ে যে কেউ সমালোচনা করতে পারেন তাতে সেক্সপিয়ার বা তার নাটকের কিছুই যায় আসে না। আপনি মহিমা নিয়ে সেক্সপিয়ার বেঁচে থাকবেন, তার নাটক বেঁচে থাকবে।
ঠিক তেমনভাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে তাকে ছোট করবার যত চেষ্টাই করেন, আপন মহিমায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মানুষের মনের মধ্যে যে জায়গা করে নিয়েছেন সেই জায়গা থেকে সরানোর ক্ষমতা কারো নেই।
ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত সংস্কৃতি কর্মীদের হুঁশিয়ারি করে তিনি বলেন, নাটক যখন শুরু করেছেন, নাটক কিন্তু বাংলাদেশে সামনে আরো অনেক হবে। আপনারা মিথ্যা ঘটনা নিয়ে নাটক বানিয়েছেন। সামনে সত্য ঘটনা নিয়ে নাটক হবে।
জাসাসের সভাপতি অধ্যাপক মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম, জাসাসের আহসান উল্লাহ চৌধুরী, লিয়াকত আলী, শাহরিন ইসলাম শায়লা, জাহাঙ্গীর আলম রিপন, আজিজমূল তৌহিদ, মীর সানাউল হক, জাহিদুল আলম হিটো, জাকির হোসেন রোকন, মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত জানানঃ