করোনা ভাইরাসের টিকা সংগ্রহে রাখার জন্য ছয়টি দেশকে নিয়ে একটি জোট গঠন করতে চায় চীন। যেন জরুরি প্রয়োজনে এ রাষ্ট্রগুলো ভ্যাকসিন পায়। ‘ইমার্জেন্সি ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি ফর কোভিড ফর সাউথ এশিয়া’ নামের এই প্ল্যাটফর্মের চীন, বাংলাদেশ ছাড়া বাকি চারটি দেশ হচ্ছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।
ভারতবিহীন এ জোটে থাকতে আপত্তি নেই বাংলাদেশের। তবে এখনো জোটটি চূড়ান্ত হয়নি, আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, এটা কোনো জোট নয়। যখন যার দরকার হবে এই ফ্যাসিলিটি থেকে তারা ভ্যাকসিনগুলো সংগ্রহ করবে। এটাকে বলছি সাউথ এশিয়া কো–অপারেশন (পারস্পরিক সহযোগিতা)। শুরুতেই চীন উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ছয় লাখ ডোজ টিকা উপহার দেবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে যার খসড়া তৈরিও শেষ হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যখন যার দরকার হবে, এই ফ্যাসিলিটি থেকে তারা ভ্যাকসিন সংগ্রহ করবে। এটাকে বলছি সাউথ এশিয়া কো–অপারেশন (পারস্পরিক সহযোগিতা)।’
এ ছাড়া নিজেরা টিকা তৈরির জন্য রাশিয়ার সহায়তাও নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে টিকা তৈরির প্রযুক্তি বাংলাদেশকে দেবে রাশিয়া। এ বিষয়েও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হচ্ছে। তবে রাশিয়া টিকা তৈরির প্রযুক্তি এক শর্তে বাংলাদেশকে দিতে সম্মত হয়েছে। সেটি হলো, প্রযুক্তিটি অন্য কোথাও দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ তাতে সম্মতি জানিয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী কোনো প্রতিষ্ঠানকে এই প্রযুক্তি দেওয়ার কথা বলছে রাশিয়া। আর এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে বাংলাদেশে করোনার টিকার কার্যক্রম যেন চলমান থাকে, সে জন্য ভারত কাজ করে যাচ্ছে। টিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘আমাদের কাছে যা আছে, তার বেশি তো দেওয়া সম্ভব না। উৎপাদনের প্রাপ্যতার তুলনায় যত বেশি সম্ভব, বাংলাদেশকে টিকা প্রদানের নিশ্চয়তা আমরা দিয়েছি। আর আমাদের যা আছে, তা বলতে পারব। যা নেই, তা বলতে পারব না। ভারতের পত্রপত্রিকায়ও টিকার ঘাটতি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। ভারতের বড় বড় শহরেও টিকার ঘাটতি রয়েছে।’ দিল্লি থেকে আগরতলা-আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বৃহস্পতিবার সকালে বিক্রম দোরাইস্বামী এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট ৩ কোটি ডোজের মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭০ লাখ টিকা দিয়েছে বাংলাদেশকে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও এরপর বাংলাদেশে আর কোনো টিকার চালান আসেনি। ভারতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো টিকা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
করোনায় আরও ৯৮ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৪০১৪
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৬২ জন ও নারী ৩৬ জন। মৃতদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯২ জন এবং বাসায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে বৈশ্বিক এই মহামারিতে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০ হাজার ৭৮১ জনে।
একই সময়ে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ১৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪ জনে। এর আগে গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১০১ জন এবং ১৮ এপ্রিল ১০২ জন মারা যান। আর গত ১৯ এপ্রিল (সোমবার) ১১২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। যা একদিনে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সবশেষ বুধবার (২১ এপ্রিল) দেশে ৯৫ জনের মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ