ভারতে তৃতীয় টিকা হিসাবে ছাড়পত্র পাওয়ার পথে রাশিয়ার তৈরি ‘স্পুটনিক ভি’। হায়দ্রাবাদের ডক্টর রেড্ডিজ ল্যাবরেটরির সঙ্গে যৌথভাবে ভারতে ‘স্পুটনিক ভি’-র পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালাচ্ছে রাশিয়া। কলকাতায় পিয়ারলেস হসপিটেক্স হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টারে ভ্যাকসিনটি নিয়ে পরীক্ষা চলছিল এতদিন। প্রথম দু’টি ধাপে ইতিমধ্যেই প্রতিষেধকটি উতরে গিয়েছে বলে জানা গেছে। এই মুহূর্তে চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। কেন্দ্রিয় সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি ইতিমধ্যে ‘স্পুটনিক ভি’ টিকা মানবদেহে প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে বলে জানা গেছে ভারতীয় আনন্দবাজার ও দ্য ওয়াল সূত্রে।
ভারতে স্পুটনিক ভি টিকা তৈরি করছে ডক্টর রেড্ডি’জ। তারা জানিয়েছে, মডের্না ও ফাইজারের পরে স্পুটনিক ভি টিকার কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি, ৯১.৬ শতাংশ। ভারতে জরুরি ভিত্তিতে এই টিকা ব্যবহারের অনুমতি পাওয়ার জন্য গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আবেদন করেছিল ডক্টর রেড্ডি’জ। বর্তমানে ভারতে এই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে।
জরুরি ভিত্তিতে মানবদেহে প্রতিষেধকটি প্রয়োগের অনুমতি চেয়ে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া-র কাছে আবেদন করেছে ডক্টর রেড্ডিজ ল্যাবরেটরি। ভারতীয়দের পক্ষে ওই প্রতিষেধক আদৌ নিরাপদ কি না, কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, রবিবার সেই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জমা দিয়েছে তারা। কয়েক দিনের মধ্যেই ছাড়পত্র মিলে যাবে বলে আশা করছে ডক্টর রেড্ডিজ ল্যাবরেটরি।
এই মুহূর্তে অক্সফোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ এবং ভারত বায়োটেক ও আইসিএমআর-এর তৈরি ‘কোভ্যাকসিন’ প্রতিষেধক ভারতে টিকাকরণে ব্যবহৃত হচ্ছে। ‘স্পুটনিক ভি’ ছাড়পত্র পেয়ে গেলে, এই নিয়ে তৃতীয় প্রতিষেধক হাতে পাবে ভারত। এত দিন যদিও আমেরিকান সংস্থা ‘ফাইজার’ আইএনসি-র তৈরি প্রতিষেধকটিই আগে হাতে এসে যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। সেই মতো ডিসেম্বরেই ছাড়পত্রের জন্য আবেদন জানিয়ে রেখেছিলেন ফাইজার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভারতে পরীক্ষামূলক নিরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্তই রাশিয়াকে তাদের থেকে এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন প্রতিষেধক বিশেষজ্ঞরা।
মস্কোর গামালিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি ‘স্পুটনিক ভি’ প্রতিষেধকটি তৈরি করেছে। গত বছর ১১ আগস্ট সেটি নথিভুক্ত করিয়ে নেয় রাশিয়া, যার ফলে কোভিড প্রতিরোধী প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী প্রথম দেশ হিসেবে উঠে আসে তারা। তবে প্রতিষেধকটির গুণাগুণ এবং কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেন বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তবে সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ সম্প্রতি জানিয়েছে, কোভিডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে ‘স্পুটনিক-ভি’-র কার্যকারিতা ৯১.৬ শতাংশ। ওই জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ‘স্পুটনিক-ভি’-র তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ২০ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীর দেহে পরীক্ষার পর এই ফলাফল পাওয়া গিয়েছে।
করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানে অন্য টিকার তুলনায় ‘স্পুটনিক-ভি’ বেশি কার্যকর বলে দাবি করেছেন রুশ গবেষকরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, মানবদেহের দু’টি ভিন্ন অ্যাডেনোভাইরাল ভেক্টরের সাহায্যে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম এটি।
ভারতে রাশিয়ার এই টিকাটি মানবদেহে প্রয়োগ ও উৎপাদনের অনুমতি পেলে দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা প্রতিরোধে টিকার সংকট অনেকটা কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল। এদিকে বাংলাদেশ সরকার টিকার সংকট নিরসনে রাশিয়া থেকে ‘স্পুটনিক-ভি’ টিকাটি সরাসরি আমদানী করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এই টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের কুটনৈতিক প্রচেষ্টা সফল হলে বেসরকারীভাবে আমদানীর জন্য বেশ কয়েকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আগ্রহী বলে জানা গেছে।
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ