করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে সম্পূর্ণ লকডাউন শুরু হলেও এ সময়ে শিল্প-কারখানা চলবে।
রোববার (১১ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি বলেন, কঠোর লকডাউনের সময় শিল্প কারখানা খোলা থাকবে। এসব কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহকারী যানবাহন চলাচল করবে। ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে আমদানি-রপ্তানি সেবা দেবে ব্যাংকগুলোর বিশেষ ব্যবস্থায়। যদি লকডাউন এক সপ্তাহের বেশি হয় তখন সাত দিন পরে ব্যাংক খোলা থাকবে।
ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে আজ রোববার বেলা তিনটায় মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে সম্পূর্ণ লকডাউন হলেও শিল্প কারখানা চলবে।
এ ছাড়া ব্যাংক বন্ধ থাকতে পারে। তাতে আমদানি রপ্তানিতে সমস্যা হবে। এ বিষয়েও পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব।’
অবশ্য সরকার এ বিষয়ে এখনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। আগামীকাল সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এর আগে আজ দুপুরে লকডাউনে পোশাক ও বস্ত্র কারখানা খোলা রাখার দাবি জানায় পোশাক খাতের চার সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ইএবি।
১৪ এপ্রিল থেকে সাধারণ ছুটির ঘোষণা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের সাধারণ ছুটি ঘোষণা আসতে পারে। এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আজ রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। এই বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ ছুটির ঘোষণা আসছে। আপাতত এক সপ্তাহের হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় পরে এটি আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোরও চিন্তাভাবনা আছে।
সাধারণ ছুটির মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ রাখাসহ অন্যান্য কী কী বিধিনিষেধ থাকবে, সেটি নিয়ে এখন কাজ চলছে। পরিপত্রে এসব বিষয় স্পষ্ট করা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের চলমান লকডাউনের ধারাবাহিকতায় চলবে আগামী কাল ও পরশু (১২ ও ১৩ এপ্রিল)। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে। আর ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে।
সরকারি সূত্রমতে, মোটামুটি গত বছর সাধারণ ছুটিতে যেভাবে চলেছিল সে রকম কিছুই হতে পারে। গত বছর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়েছিল। প্রথমে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরে কয়েক দফায় বাড়িয়ে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি হয়। প্রথমে জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকলেও একপর্যায়ে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাসহ কিছু কিছু বিষয় খুলে দেওয়া হয়েছিল।
করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় দেশে রেকর্ডসংখ্যক ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৮১৯ জন। আজ রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৯ হাজার ৩৭৬ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
এ পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৬ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ হাজার ৭৩৯ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯০ জন। গতকাল করোনায় ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর ৫ হাজার ৩৪৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় সরকার। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে শনাক্তের হার কমতে শুরু করে।
গত জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাস করোনার সংক্রমণ ছিল তীব্র। মাঝে নভেম্বর-ডিসেম্বরে কিছুটা বাড়লেও বাকি সময় সংক্রমণ নিম্নমুখী ছিল। এ বছর মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ বেশি তীব্র। মধ্যে কয়েক মাস ধরে শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। কিন্তু মার্চ থেকে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যাও আবার বাড়তে শুরু করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ