কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান নয়নের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত ৪ এপ্রিল ভিকটিম আদালতে একটি মামলা করেছেন। কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ কিরণ শংকর হালদার মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। পিবিআইকে আগামী ২৯ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, লুৎফর রহমান নয়নের সঙ্গে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ওই তরুণীর পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর থেকে নয়নের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাসায় বেড়াতে যেতেন তরুণী।
এ সুবাদে গত বছরের ২০শে অক্টোবর রাত ৮টার দিকে লুৎফর রহমান নয়ন শহরের গাইটাল এলাকায় জুয়েল রানা নামে তার এক বন্ধুর বাসায় তরুণীকে নিয়ে যান। ওই বাসায় গিয়ে তরুণী দেখেন, জুয়েল রানার স্ত্রী বাসায় নেই। তখন জুয়েল রানার সঙ্গে সেলিম নামের আরেকজন অবস্থান করছেন। তারা দুজন নয়ন ও তরুণীকে বাসার ভেতরের কক্ষে যাওয়ার কথা বললে তারা সেখানে যান। ভেতরের কক্ষে যাওয়ার পর নয়ন দরজা বন্ধ করে দিলে তরুণী আপত্তি জানান। পরে কথোপকথনের এক পর্যায়ে রাত ৯টার দিকে নয়ন তরুণীকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় তরুণী কান্নাকাটি শুরু করলে নয়ন তাকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তী সময়ে নয়নকে বিয়ের জন্য তরুণী চাপ দিয়ে আসছিলেন। ইতিমধ্যে তরুণীর শারীরিক পরিবর্তন ঘটলে গত ২১শে জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ নগর মাতৃসদনে গিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করান। তখন তার প্রেগনেন্সি পজেটিভ আসে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর নয়নকে জানায় সে।
এরপর গত ২৫শে জানুয়ারি সন্ধ্যায় ওই তরুণীকে শহরের স্টেশন রোডের একটি রেঁস্তরায় দেখা করতে বলেন নয়ন। সেখানে নয়ন তরুণীকে বলেন, গর্ভের সন্তান নষ্ট করলে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে বিয়ে করবেন। তখন নয়নের সঙ্গে থাকা সেলিমও তরুণীকে অনুরোধ করেন। তাদের কথায় তরুণী রাজি হলে নয়ন তরুণীকে একটি ট্যাবলেট মুখে তুলে খাইয়ে দেন এবং আরো ৪টি ট্যাবলেট দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর একসঙ্গে সেবন করতে বলেন। সে অনুযায়ী পরদিন ২৬শে জানুয়ারি দিবাগত রাতে ওই ৪টি ট্যাবলেট সেবন করার পরবর্তী দুইদিনের মধ্যে তরুণীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে নয়নকে বিয়ের জন্য বললেও তরুণীকে এড়িয়ে যান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান নয়ন জানান, ওই তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দূরে থাক তার তেমন জানাশোনাই নেই। তাই অভিযোগের বিষয়টি কাল্পনিক ও অবান্তর। এমন কাল্পনিক অভিযোগে মামলার বিষয়টি তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার একটি ঘৃণ্য অপচেষ্টা। এদিকে কিশোরগঞ্জের পিবিআই পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম এ ব্যাপারে জানান, ট্রাইব্যুনাল থেকে তারা আদেশের কপি পেয়েছেন। পিবিআইয়ের এসআই জিয়া উদ্দিনকে বিষয়টির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর ছাত্র সংগঠনের ধর্ষণকাণ্ড লিখতে গেলে কয়েক খণ্ড গ্রন্থ রচিত হয়ে যাবে। ধর্ষণকাণ্ডের অধিকাংশই খবরে আসে না। ধর্ষণের শিকার নারীরা সাধারণত ভয়েই ঘটনা প্রকাশ করেন না। এসব সমস্যা ছাপিয়ে ছিটেফোঁটা যে দু-একটি খবর প্রকাশিত হয়, সেগুলোর কয়েকটি দিয়েই অপরাধীদের দায়মুক্ত থাকার নমুনা টের পাওয়া যায়। তারা জানে, পুলিশ, আইন, বিচার প্রভৃতি সবকিছুই তাদের ক্ষমতার কাছে নতজানু। সরকার দলীয় বিধায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে কেউ সাহস করে না। নারী নির্যাতন রোধে বিভিন্ন আইন ও তাতে শাস্তির বিধান থাকলেও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে নারীর ওপর সহিংসতা দিনদিন বাড়ছেই। ছোট-বড় সব নারীর সম্মান রক্ষা করা সমাজের নৈতিক দায়িত্ব এবং নারীর ওপর সহিংসতা বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩২৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ