হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে কটাক্ষের অভিযোগে ঝুমন দাস আপন (২৩) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) রাতে শাল্লা উপজেলার শাঁসকাই বাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
পোস্টটি দেখে বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রাম ঘেরাও করে রাখে আশপাশের হাজার হাজার মানুষ। রামদা, লাঠি-সোটা নিয়ে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ ওই গ্রামটি ঘেরাও করে রাখে বলে স্থানীয়রা জানান।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার (১৫ মার্চ) সুনামগঞ্জের দিরাই শানে রিসালাত সম্মেলনে লক্ষাধিক মানুষের সামনে বক্তব্য রাখেন মামুনুল হকসহ হেফাজত ইসলামের নেতারা। সেই সূত্রধরে ঝুমন দাস আপন তার ফেসবুক আইডি থেকে আল্লামা মামুনুল হককে কটাক্ষ করে একটি পোস্ট দেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) ওই যুবককে পুলিশে দেন স্থানীয়রা। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয় নোয়াপাড়া গ্রামে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যে কারণে অভিযুক্ত ঝুমন দাস আপনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
গ্রামবাসীদের দাবি, হুজুরকে (আল্লামা মামুনুল হক) নিয়ে সে কটাক্ষ করেছে। সে এ সাহক কোথা থেকে পেয়েছে, আর তার পেছনে কে আছে- তাদের পুলিশ খুঁজে বের করে আইনের আওতায় না আনলে ঘেরাও করা গ্রাম তারা ছাড়বেন না।
দিরাই উপজেলার বাসিন্দা ফয়জ উদ্দিন বলেন, ‘ফেসবুকে পোস্টটি দেখার পর সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। কখন সকাল হবে শুধু সেই কথা ভেবে রাত পার করেছি। জীবন দেয়ার হলে দিব তবু ধর্ম নিয়ে কেউ যদি অশ্লীল কোন কথাবার্তা বলে তাকে ছাড় দিব না।’
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন,‘ ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।’
বাংলাদেশে গত ৯ বছরে কয়েকটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রায় একই ধরণের কৌশল ব্যবহার করে এসব হামলার পটভূমি তৈরি করা হয়েছে।
২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের বাড়িঘর ও বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনা পুরো দেশকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিলো। তখনও ফেসবুকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একজনের নামকে যুক্ত করে দেয়া হয়েছিলো।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন মনে করে, বিষয়টি শুধু ইসলামের অবমাননা নয়, এর সাথে রাজনৈতিক বিষয়ও জড়িত। ইসলামপন্থী সংগঠনগুলো এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রভাব জানান দিতে চায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জোবাইদা নাসরিন বলেন, এ ধরণের সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোকে আশ্রয় দিয়ে, প্রশ্রয় দিয়ে এবং সংগঠিত করে তারা মনে করিয়ে দিতে চায় যে তারা শক্তিশালী। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম এখনো বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোন ফেসবুক আইডিতে ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে কিংবা সেখানে কী লেখা হয়েছে, সেটি আসল আইডি কিনা এ সম্পর্কে অধিকাংশের কোন ধারণাই থাকেনা। প্রতিবাদকারীরা এগুলো যাচাই করার প্রয়োজন মনে করেন না। এটা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্ষমতার জোর।
তাদের মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্ষমতা দেখানোর প্রবণতা থেকেই মানুষ যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন বোধ করে না। এদিকে সরকারও বলছে, গুজবের উপর ভিত্তি করেই অনেকেই সহিংসতায় জড়িয়ে যাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৫৯
আপনার মতামত জানানঃ