কুষ্টিয়া সদরে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে শহিদুল ইসলাম নামে এক রেলওয়ে কর্মীকে মেরে দাড়ি উপরে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৫ মার্চ) রাত ৮টার দিকে শহরের মিলপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে, অভিযুক্ত ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম ওয়াহেদ খান রনি (৩৫)। তিনি কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের ১০ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনায় শহিদুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা বাদী হয়ে ওয়াহেদ খান রনি সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির বলেন, ‘একটি এজাহার পেয়েছি। একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে। আজকের মধ্যে মামলা রজু করা হবে বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শনিবার ( ৬ মার্চ ) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে শুয়ে আছেন ট্রলিম্যান শহিদুল ইসলাম (৫২)। তার ভাষ্যমতে, তিনি মিলপাড়া এলাকায় রেলওয়ের কুষ্টিয়া উপসহকারী প্রকৌশলী কার্যালয়ে ট্রলিম্যান হিসেবে কর্মরত। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মিলপাড়া এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিনি কাজ করছিলেন।
ট্রলিম্যানের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জের ধরে রাত আটটার দিকে ওয়াহেদ খান কাজ করা অবস্থায় তাকে ধরে স্টেশনে নিয়ে যান। সেখানে অনেক লোকজনের সামনে তাঁকে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তোলেন। কখনো জামায়াত-বিএনপি, আবার কখনো ট্রেনের চোর বলে আখ্যায়িত করেন। একপর্যায়ে ঘাড় চেপে ধরে লাঞ্ছিত করেন। সেখানে মারধরের পর পাশের বাজারে মিষ্টির দোকানের সামনে নিয়ে আবার মারধর করা হয়। এ সময় তাঁর ছেলে মাসুদ রানা রক্ষা করতে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। মারধরের তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, পূর্বশত্রুতার জেরে ওয়াহেদ তাকে লাঞ্ছিত করেছেন। শত্রুতা কী নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রেলের কোয়ার্টারে অবৈধভাবে ওয়াহেদের এক আত্মীয় বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি তাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অপসারণ করে বাসাটি খালি করে। ওয়াহেদ মনে করেন, এমনটা আমার কারণে হয়েছে।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক সাহেব আলী বলেন, শহিদুল ইসলামকে রাতে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার ছেলেকেও মারধর করা হয়েছে। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতেই আছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াহেদ খান রনি দাবি করেন, শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে রেলের সম্পদ লুট করছেন। তিনি যে ট্রেনের বিভিন্ন কিছু চুরি করেন, এটা এলাকার সবাই জানেন। ট্রেন দুর্ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা আছে। তাকে কোনোভাবেই মারধর করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। মুখ ধরে তোলা হয়েছিল কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনগণ যখন শহিদুলের মুখ দেখতে চাইছিলেন, তখন মুখ তুলে ধরতে এমন করা হয়েছে। যাতে সবাই তাকে দেখতে পায়।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিভিন্ন রকমের অভিযোগ আসে। বিভিন্ন দুর্নীতি, সরকারি অনুদান চুরি, জোর করে জমি দখলসহ আরো বিভিন্ন অপকর্মের সাথে তারা জড়িয়ে পড়েছেন যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। সম্প্রতি এসব যেন বেড়েই চলছে। নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্যই শহিদুল ইসলামের সাথে এমন গুণ্ডামি করেছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে সরকারের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ এবং প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষীদের কেবল বরখাস্তই নয়, উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ